স্বপ্নের টানে মানুষ ছুটে চলে আজীবন। স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেখতে কে না চায়। তবে স্বপ্ন কেবল দেখতেই সরল, সেই স্বপ্ন পূরণ করার লড়াইটা বেশ কঠিন। হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন কেবল স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া ভাগ্যবানের সংখ্যা অনেক কম। তবে কঠিন অধ্যাবসায় ও লক্ষ্য যদি স্থির হয় কোনো প্রতিকূলতাই মানুষকে হারতে দেয় না কখনো।
এমনই এক প্রৌঢ়ের স্বপ্ন পূরণের গল্প দেখা গেলো খবরের পাতায়। ৭২ বছর বয়সী প্রৌঢ় নিজের ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে গণিতশাস্ত্রে পি এইচ ডি (PhD)অর্জন করেছেন। সকল শিক্ষার্থীর কাছে তিনি এক বিশেষ দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছেন। বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেকে জয়ী করে তুলেছেন তিনি। তার ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যাবসায়ের প্রশংসা করেছেন অধ্যাপক তথা তার প্রদর্শক অমরকুমার বন্দোপাধ্যায়।
অমরকুমার বন্দোপাধ্যায় হলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক। তিনি জানিয়েছেন, কঠিন অধ্যাবসায় আর ইচ্ছা না থাকলে এই বয়সে এসে কারুর পক্ষে গণিতের মতো বিষয়ে পি এইচ ডি করা সম্ভবপর নয়। উনি আরও জানান, প্রথম থেকেই জগন্নাথবাবু গণিতের গবেষণায় নিজেকেও নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু চাকুরীর কারণে তা আর তিনি করে উঠতে পারেননি, তবে চাকুরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হতেই নিজের স্বপ্নকে আবার নতুন করে নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে তোলেন তিনি।
জগন্নাথ পাল একজন সরকারি ব্যাঙ্ককর্মী ছিলেন। অবসরপ্রাপ্তির পর কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রী বিয়োগ ঘটলে নিজের স্বপ্নকে আকঁড়ে ধরেন তিনি। বর্তমানে তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংককর্মী (Retired Bank Employee)। তার দুই ছেলে আছেন। তারাও নিজেদের জীবনে সু-প্রতিষ্ঠিত। মধ্যবিও পরিবারের সন্তান জগন্নাথ পাল নিজের অধ্যাবসায়ের জোরে সরকারি চাকরি পেয়ে গেলে সুযোগ ছাড়তে পারেননি। তাই নিজের স্বপ্নকে সরিয়ে রেখে কর্তব্যে ব্রতী হয়েছিলেন তিনি। তবে নিজের স্বপ্নকে কখনই ভুলে যাননি তিনি। আর তাইতো সুযোগ পেতেই আবারো ছুটে যান সেই স্বপ্নের মোহে। তার পি এইচ ডি অর্জনের দৃঢ়তা ভবিষ্যতের দৃষ্টান্ত।
১৯৭৬ সালে জগন্নাথ পাল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্যামসুন্দর কলেজ থেকে গণিতে স্নাকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। উচ্চশিক্ষার পাঠ শেষ করে অধ্যাপনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। মাঝে শ্যামসুন্দর কলেজ তিনি বেশ কিছুদিন অধ্যাপনার কাজেও নিযুক্ত হন। কিন্তু শেষমেষ সরকারি চাকরির সুযোগ পেলে সুযোগ হারানোর সাহস করতে পারেননি তিনি। তবে, দীর্ঘ ৩২ বছরের চাকরি জীবন থেকে অবসর পেয়ে ২০১৮ সালে তিনি আর ই টি (রিসার্চ এন্ট্রান্স টেস্ট) পরীক্ষায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই গণিতশাস্ত্র নিয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন তিনি। ২০২২ সালে তিনি ‘জেনারেল ট্রপলজি (General Topology)’ নিয়ে নিজের গবেষণা শেষ করেছেন।