লকডাউন (Lockdown) শব্দটার সাথে বিগত ২ বছরে আমাদের পরিচিতি বেশ গভীর হয়েছে। করোনা অতিমারীর কারণে বারংবার সরকারের পক্ষে লকডাউন ঘোষণায় গৃহবন্দী জীবন কাটিয়েছে সমগ্র বিশ্ব। গৃহবন্দী থেকেও মানুষ হারিয়েছে নিজের পরিজনদের। হারিয়েছে কর্মসংস্থান। প্রতিমুহূর্তে ভয়ের নিশ্বাস ফেলেছে মানুষ। একটি ভাইরাস গোটা বিশ্বে গড়ে তুলেছে আতঙ্কের পরিবেশ। স্বজন-পরিজন ও নিজেকে বাঁচাতে সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলায় আজ বিশ্বে করোনার ভয়াবহতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণাধীন। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত কোনো লকডাউন না থাকায় জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে।
তবে, সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার সারুবুজ্জিলি গ্রামে (Sarubujjili Village) নতুন করে জারি করা হয়েছে লকডাউন। তবে এই লকডাউন করোনা আতঙ্কের জেরে নয় বরং ভূতের ভয় পেয়ে গ্রামবাসীরা নিজেরাই লকডাউন (Lockdown) পালন করছেন। গ্রামে একের পর এক মানুষ মারা যাওয়ার কারণ স্বরূপ কোনো এক গুনিনের কথায় গৃহবন্দী হয়ে গ্রামবাসীরা ভূত তাড়ানোর উদ্দেশ্যে সমগ্র গ্রাম জুড়ে লোকডাউন ঘোষণা করে রেখেছিল।
অন্ধবিশ্বাস, কু-সংস্কার সর্বদা মানুষকে পিছিয়ে রাখে। অন্ধকারে ঘিরে রাখে। ভূত, প্রেত ইত্যাদি অন্ধবিশ্বাসের কবলে পরে কত মানুষকে বলির শিকার হতে হয়। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়েও বহু মানুষের মনে এই বিষয়গুলি চরম ভয়ের সঞ্চার করে থাকে। যা থেকে মানুষ কিছু অন্যায় কাজকর্মের শিকার হয়ে পড়েন। এই সমস্ত অন্ধবিশ্বাসী মানুষের মনে তার ভয়কে বাঁচিয়ে রাখতে আর এক শ্রেণীর মানুষ প্রতারণা করার সুযোগ নেন। ওঝা, গুনিন, সাধু ইত্যাদি সেজে মানুষকে ঠকিয়ে বেড়ান। প্রয়োজনে অন্যায় ভাবে মানুষকে হত্যাও করেন। আর তাদের এই প্রতারণাকে প্রশ্রয় দেন সমাজে অন্ধবিশ্বাসে ডুবে থাকা মানুষজনগুলো।
সারুবুজ্জিলি গ্রামে এমনি এক ঘটনার শিকার হলেন সমগ্র গ্রামবাসী। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামে পরস্পর পাঁচজনের মৃত্যু হওয়ায় গ্রামবাসী ভয় পেয়ে যান। আর তারা নিজেদের মধ্যে ভীত হয়ে এই মৃত্যু গুলোর যোগসূত্র বানিয়ে ফেলেন, আর মৃত্যুগুলোর কারণ জানতে কু-সংস্কারের বশবর্তী হয়ে তারা দ্বারস্থ হন গ্রামের এক গুনিনের কাছে। যিনি সকল গ্রামবাসীর মনের ভয়কে উস্কে দিয়ে বলেন গ্রামে ভূতের উপদ্রব শুরু হয়েছে। ভূত একে একে সবাইকে মেরে ফেলবে তাই বাড়ি থেকে যেন কেউ না বের হয়। আর গ্রামের বাইরেও কাউকে যেতে মানা করা হয়।
তাই সকল গ্রামবাসী নিজেদের গৃহবন্দী করে যাগ-যজ্ঞ করে ভূত তাড়ানোর উদ্দেশ্যে সমগ্র গ্রাম জুড়ে লোকডাউন ঘোষণা করে রেখেছিলো। কিন্তু পরে পুলিশ এই ঘটনার খবর পেলে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে, তাদের সাথে কথা বলে এই লোকডাউন শেষ করেন। আর গ্রামবাসীকে বলেন তারা যেন নিজেরা নিজেরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন।