তৌসিফ রহমান (Touseef Rahman)। বর্তমানে এই নামটি অনেকের কাছেই পরিচিত। আবার অনেকেই হয়ত একেবারেই চেনেননা তাকে। তবে নাম যাই হোক না কেন। তার কাজ কিন্তু বেশ প্রশংসনীয়। তার কাজের ধরণ বুঝিয়ে দেয় তিনি কর্মে বিশ্বাসী। আর সবচেয়ে বেশি মানবধর্মে বিশ্বাসী। কলকাতা আলিমুদ্দিনের এই বাসিন্দা এমনটাই প্রমান করলেন তার কাজের মধ্যে দিয়ে।
গ্রীষ্মকাল শুরুর পর থেকেই গরমের পারদ ক্রমশ উর্দ্ধমুখী। আর এই প্রখর রোদ্দুরে হাঁসফাঁস করছে সকল মানুষ। বাড়ির চারদেওয়ালে কতক্ষণই বা থাকা সম্ভব। কাজের তাড়নায় সব মানুষকেই বাইরে বেরোতেই হয়। কিন্তু রাস্তায় বেরোলেই সহ্য করতে হবে গ্রীষ্মের প্রখর রোদের দাবদাহ। গ্রীষ্মকালে জলের চাহিদা প্রচুর পরিমানে বেড়ে যায়। আর পথচলতিদের সেই জলের কষ্ট থেকে একটু স্বস্তি দিতে তৌসিফ রহমান (Touseef Rahman) রাস্তায় বসালেন ফ্রিজ।
রাস্তাঘাটে আমরা জল সাথে করে নিয়ে বেরোলেও যদি সে জল গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই শেষ হয়ে যায় আর রোদ্দুরে আপনার প্রচন্ড তেষ্টায় প্রান্ত চটপট করে একটু জলের আশায়। পথচলতি সেই সব পিপাসার্থ মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে আর পথের বাকি মানুষগুলো যারা একদম নিঃস্ব তাদের কথা চিন্তা করে কলকাতা আলিমুদ্দিনের বাসিন্দা তৌফিক গত এপ্রিল মাসে রাস্তার ধরে বসিয়েছিলেন ফ্রিজ।
আর সেই ফ্রিজ পথের বহু তৃষ্ণার্থের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। আশপাশের অনেক মানুষ সেই ফ্রিজে নিজের মতন করে কেউ জলের বোতল ঠান্ডা করতে রেখে দেন, কেউবা বরফ জমিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। এভাবেই তৌফিকের এক বিশাল যজ্ঞ সফল হয়ে ওঠে। তবে এনার তিনি জনসাধারণের জন্য চিন্তা করেছেন নতুন কিছু। তিনি মধ্য কলকাতার গির্জা বাস স্টপে বসাতে চলেছেন ‘স্ট্রিট লাইব্রেরি’।
কলকাতার যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে লাইব্রেরি : (Kolkata Bus Stop Library)
যদিও কলকাতার বুকে এই ভাবনা নতুন হলেও এই ভাবনাটি আগেই গৃহীত হয়েছে কর্নাটকে। কর্নাটকে পরিবহন কর্পোরেশনের তরফে বাস স্টপ গুলিতে বই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাবো পরে কর্ণাটক রাজ্য সরকারের তরফেও চলন্ত ট্রামেও বই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তৌফিক রহমানের ভাবনা বেশ প্রশংসনীয়।
তবে রাস্তার ধরে খোলা জিনিস পরে থাকবে আর চুরি হবে না ? এমনটা বেশ আশ্চর্জনক ব্যাপার হবে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল অনেকের মনেই। কিন্তু তৌফিক জানান, বই প্রেমীরা বাস স্টপে বই রাখার গুরুত্ব বেশ বুঝবেন। তারা যখন বুঝতে পারবে ইটা কারুর একার নয় জনসাধারণের তখন আলাদা করে কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজনই হবে না। এছাড়া, রাস্তার ধারে ফ্রিজের ক্ষেত্রেও তো মানুষ বুঝেছেন। তার জন্যও আলাদা কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়নি।
আরও পড়ুনঃ দেশে মাঙ্কি পক্সের উদ্বেগ! সংক্রমণ রুখতে আগাম কড়া সতর্কতা জারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
তৌফিক এই ‘স্ট্রিট লাইব্রেরি’ সম্পর্কে জানিয়েছেন, বাস স্টপে বাসের জন্য একটানা বসে থাকাটা ভীষণ বিরক্তকর। সেই সময় যদি বাসের অপেক্ষায় বসে থাকা যাত্রীরা একটু গল্পের বই পরে বা কমিক পরে সময় কাটান তাহলে সময় তা খুব সহজেই কেটে যাবে। সাথে এই মোবাইলের দুনিয়ায় একটু অন্যরকম নেশাও তৈরী হবে মানুষের। বই পড়ার অভ্যাস মানুষ আয়ত্ত করে নিতে পারবেন আবার।
আরও পড়ুনঃ ধুমধাম করে বিয়েতে বিচ্ছেদের ঝুঁকি! সমীক্ষা বলছে অল্প খরচে বিয়েই নাকি হবে দীর্ঘস্থায়ী
তৌফিক আরো জানিয়েছেন, প্রাথমিক বন্দোবস্ত তিনি করবেন তবে তার বিশ্বাস সকলে এগিয়ে আসবেন নিজেদের পুরোনো সঞ্চিত বই এই স্ট্রিট লাইব্রেরিতে দেন করতে। হিন্দি, উর্দূ, বাংলা, ইংরেজি সব ভাষার বইই থাকবে এই লাইব্রেরিতে। তবে বাস স্টপে লাইব্রেরির মতন ব্যাপার কলকাতায় কতটা গ্রহণযোগ্য হতে চলেছে তা পরীক্ষনীয়। আর তাই আপাতত কেবল একটি স্টপেই বসতে চলেছে এই লাইব্রেরি।