‘বয়কট’ কথার অর্থ বর্জন করা। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ বিরোধী একটি আন্দোলন হয়, যা স্বদেশি আন্দোলন নামে খ্যাত। এই আন্দোলনে বিদেশী দ্রব্য বর্জন করে স্বদেশী দ্রব্যকে অর্জন করায় ছিল বয়কট আন্দোলন। এর ফলে স্বদেশী জিনিসের প্রাচুর্যতা বাড়বে, নিজের দেশের জিনিস তারা ব্যবহার করতে পারবে। তবে শুধু জিনিস নয়, বিদেশী চিন্তাভাবনাকেও বর্জন করতে হবে। এটা তো আমি ইতিহাসের বয়কট আন্দোলন সম্পর্কে বললাম। কিন্তু বর্তমানেও শুরু হয়েছে, বয়কট আন্দোলন।
তবে এই আন্দোলনের কাহিনী আলাদা। এ হল সিনেমার বয়কট। টলি থেকে বলি সব সিনেমাতেই হচ্ছে বয়কট। চারিদিকে শুধু বয়কট। ‘লাল সিং চাড্ডা’, ‘রক্ষা বন্ধন’, ‘দোবারা’ বলিউডের এই সিনেমা গুলোও বাদ যায়নি। শুধু তাই নয়, টলিউডেরও একের পর এক সিনেমা বয়কট। রাজ চক্রবর্তীর (Raj Chakrabarty) ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’ (Dharmajuddha) , ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের (Indraadip Dasgupta) ‘বিসমিল্লা’ (Bismillah) এই ছবি গুলোও পেয়েছে বয়কটের ডাক।
রাজ চক্রবর্তীর ধর্মযুদ্ধ ছবির পোস্টার শেয়ার করে এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘এই সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে ‘যদা যদা হি ধর্মস্য’ বলতে বলতে একটি মুসলিমের গলা কাটছে এক হিন্দুর। শুধু তাই নয়, একটি মুসলিম মহিলাকে ধর্ষণ করছে এক হিন্দু মাথায় তিলক লাগিয়ে। তাহলে ভাবুন কতোখানি প্রোপাগাণ্ডা ফিল্ম।’
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ‘বিসমিল্লা’ নিয়ে নেটিজেনদের বক্তব্য, একদিকে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি যখন বন্দেমাতরম বলছে, তখন টলিউড ইন্ডাস্ট্রি বিসমিল্লাহ বলতে বাধ্য করাচ্ছে, হোক বয়কট। তবে শুধু এই দুটো ছবি নয়, এবার বয়কট হল, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের (Kaushik Ganguly) যৌথ পরিচালনায় তৈরি ছবি ‘লক্ষ্মী ছেলে’ (Lokkhi Chele)।
অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, নিচু জাত-উঁচু জাতের সংঘর্ষ, গ্রামের মানুষের ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিন ডাক্তারি পড়ুয়ার গল্পের কাহিনী নিয়ে ‘লক্ষ্মী ছেলে’ ছবি। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিয়ে ছেলে খেলছে এই ছবি তাই এই ছবিও বয়কট ঘোষণা হল। এই ছবিটির জন্য প্রথমে বিজেপি অভিনেত্রী অগ্নিমিত্রা পল আপত্তি জানান।
এই প্রসঙ্গে রাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিজেপির আইটি সেলের কর্মীরা এই কাজ করছেন, সবজায়গায় রাজনীতি ঢোকানো ভালো নয়। যারা এই সব বয়কটের পোস্ট করছেন, তারা বিজেপির লোক। এরা হাতের মুঠোয় সিনেমা জগতকে আনতে চাইছেন। আগামী দিনে সব ছবিকেই তারা বয়কট করবে। ধর্ম দিয়ে দেশভাগ হয়, সিনেমা বা গান নয়’।