বাংলার জনপ্রিয় একজন সংগীত শিল্পী হলেন কৌশিকী চক্রবর্তী (Kaushiki Chakraborty)। তাঁর শাস্ত্রীয় সংগীতের দক্ষতায় মুগ্ধ বাঙালী। আর দক্ষ হবে নাই বা কেন, কোন পরিবারের মেয়ে দেখতে হবে তো, বিখ্যাত ভারতীয় ক্লাসিকাল সঙ্গীত শিল্পী অজয় চক্রবর্তীর কন্যা তিনি, এমনকি তাঁর মা চন্দনা চক্রবর্তীও একজন স্বনামধন্য সংগীতজ্ঞ। এমনকি তাঁর ছেলেও সংগীতের পথে হেঁটেছে।
মাত্র দু বছর বয়স থেকেই তাঁর সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়, মাত্র সাত বছর বয়স থেকে সঙ্গীত জীবনের শুরু হয়। দশ বছর বয়সে তাঁর বাবার গুরু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ মহাশয়ের অধীনে তিনি সঙ্গীত প্রশিক্ষণ নেন। তাঁর কখনোই লেখাপড়া ভালো লাগতনা, তাই স্কুলের শিক্ষকরা জানান, সংগীত নিয়েই যেন পড়াশোনা করে। এরপর আইটিসিতে গানের একাডেমিতে ভর্তি হন, এখানে ২০০৪ সালে গানের প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
সংগীতের প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, প্লেব্যাকের পথ চলা শুরু হয়। ২০০৫ সালে ‘ওয়াটার’ ছবিতে নরসিং মেহতার লেখা ‘বৈষ্ণব জানা তু’ গানটি দিয়ে শুরু হয় উজ্জ্বলময় যাত্রা। এরপর একে একে বিখ্যাত বিখ্যাত সিনেমায় গান করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘জানি দেখা হবে’, ‘পাঁচ অধ্যায়’, ‘হৃদমাঝারে’ সহ বিভিন্ন ছবিতে গান করেন। শুধু আধুনিক গান নয়, রবীন্দ্রসংগীতেও তাঁর অপরিসীম দক্ষতা।
বর্তমানে তাঁকে এখন বিচারকের আসনেও বসতে দেখা যায়, তবে অভিনেত্রীর পথচলা এতটাও মসৃণ ছিলনা। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের কন্যা তিনি। সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাননি তিনি। সাধ্যের মধ্যেই সাধ্য খুঁজতেন। কখনোই বিলাসিতার লালসা তাঁকে গ্রাস করেনি। গায়িকার বাবা পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী শ্যামনগরের তাতীর পরিবারের ছেলে ছিলেন, বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, আর মা তাঁত চালাতেন।
সেই কাপড় পাড়ায় গিয়ে বিক্রি করতেন, শুধু তাই নয়, শ্যামনগর স্টেশনে বসে ডাবও বিক্রি করেছেন। সেই সময় পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে ব্যাঙ্কের চাকরির সুযোগ এসেছিল, কিন্তু তিনি কাজ করেননি, কারণ তাঁর বাবা চাইতেন না, ছেলে কেরানি হোক, তিনি চাইতেন ছেলে শিল্পী হোক। একসময় এমন দিন গেছে যে, বাড়িতে চুনোপুটি ছাড়া বড় মাছ কখনও দেখতে পাননি।
তাঁর বাবা যখনই বাজারে যেতেন, তখনই বাজার থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দিয়ে বলা হত, তাতীর বাড়ির ছেলে ওদিকে যান চুনোপুটি মাছের দিকে। এই প্রতিকূলতার মাঝে বড় হয়ে উঠেছেন এই সংগীতশিল্পী, কখনোই বিলাসিতা তাঁকে গ্রাস করেনি। শুধুমাত্র সংগীতকে ভালোবেসে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়েছেন, পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী এবং তাঁর কন্যা কৌশিকী চক্রবর্তী। যা সকল মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।