বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে অনেকটা অগ্রগতির পথে এগিয়ে দিলেও একদল মানুষ আজও অনেকটা পিছিয়ে। বিজ্ঞানের যুক্তিপূর্ণ জ্ঞানের আলো সেই মানুষদের স্পর্শ করতে পারেনি। আজও বহু কু-প্রথা, কু-সংস্কার মানুষকে ঘিরে রেখেছে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে। কু-প্রথায় ঘোর অন্ধবিশ্বাস সর্বদা মানুষকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রাখে। বিজ্ঞানের আলোকে স্পর্শ করতে পারলে তবেই বিকাশের পথ উন্মূক্ত হবে।
সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন একটি খবর ভাইরাল হয়েছে যা দেখে রাজ্য কমিটির বিজ্ঞানমঞ্চের একাংশ সদস্য হতবাক হয়েছেন। মানুষ কতটা অন্ধবিশ্বাসী হলে এমন একটা কাজ করতে পারে সেটা ভেবেই বেশ চমকিত ও ক্ষুব্ধ বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্যরা। ঘটনাটি ঘটেছে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি (Siliguri) মহকুমার অন্তর্গত মূলত পশ্চিম ডুয়ার্সে অবস্থিত একটি ব্লকে যার নাম ফাঁসিদেওয়া।
সম্প্রতি এই ফাঁসিদেওয়ার (Phansidewa) রাঙাপানি (Rangapani) নামক একটি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় তিন ছেলে পঞ্চায়েতের পরামর্শে মায়ের মাটির পুতুল বানিয়ে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করলো। এমন বিরল ঘটনা ঘটতে দেখে ওখানকারঅধিবাসীরাও বেশ হতবাক হয়েছেন। ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ বৃদ্ধা মায়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে অবশেষে তাকে মৃত ধরে নিয়ে তার আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এই পথ অবলম্বন করেছেন নিখোঁজ সাবিত্রী চৌধুরীর তিন ছেলে।
সাবিত্রী চৌধুরীর স্বামী জয়লাল চৌধুরী মারা যাওয়ার পর ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানি স্টেশন চত্বরে তিনি তিন ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন। তবে সূত্রের খবর, স্বামী হারানোর পর বৃদ্ধার মানসিক পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে, তিনি মাঝে মধ্যেই একা একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন, কিন্তু কখনো এভাবে হারিয়ে যাননি। নিজে থেকেই আবার ফায়ার আসতেন সর্বদা। কিন্তু গত ১৫ বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি কোথায় চলে গেলেন? আর তার খোঁজ পাওয়া গেলোনা।
পনেরোটা বছর কেটে গেলেও ছেলেদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান আর ঘটে না। তাদের মা আর ফেরেননি ঘরে। তাদের কথায় সাবিত্রী যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন তার বয়স তখনই ছিল প্রায় ৭০ বছরের কাছাকাছি। তাই সেই বৃদ্ধা এতগুলো বছর পরও আর বেঁচে নেই বলেই ধারণা তার ছেলেদের। আর তাই, মায়ের শেষকৃত্য পালন করতে পঞ্চায়েতের পরামর্শক্রমে মায়ের মাটির পুতুল তৈরী করে সমস্ত নিয়মনীতি মেনে তারা শ্মশানে মায়ের পুতুলের শেষকৃত্য করে।
এই ঘটনা সামনে আসতেই বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্য শংকর কর (Shankar Kar) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ থাকলে তাকে মৃত ঘোষণা করার আইনি প্রক্রিয়া আছে, ওই বৃদ্ধার ছেলেরা সেই পথ অবলম্বন করেছে কি? সকল গ্রামবাসীরাও এই অদ্ভুত কাণ্ডে তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। এগুলো কেবল সেই পরিবারের মানসিক সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই না।’