সিনেমা দেখতে ভালোবাসেননা এমন মানুষ খুব কম আছেন। কেউ সিনেমার নায়ককে পছন্দ করেন, কেউ নায়িকাকে, তো কেউ আবার ভালোবাসেন কেবল সিনেমার গল্পকে। তবে একটি সিনেমা নায়ক, নায়িকা, অ্যাকশন, সুন্দর একটি গল্প ছাড়াও আরও এক বিশেষ ব্যক্তির জন্য বা চরিত্রের জন্য সফলতা পায়। আর সেই চরিত্র হলো ভিলেন চরিত্র। একটি সিনেমায় একজন হিরো যতটা গুরুত্বপূর্ণ তেমনই একজন ভিলেনও ততটাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। বলিউডের সেরা ভিলেনরা (Bollywood Vilain’s) হলেন।
একটি সিনেমায় ভিলেন চরিত্র থাকে বলেই নায়কের চরিত্রকে পর্দায় হিরো হিসাবে দেখানো সম্ভবপর হয়। সিনেমায় ভিলেনের উপস্থিতি নায়কের চরিত্রকে প্রাধান্য পেতে সাহায্য করে থাকে। সিনেমায় নায়ক ও ভিলেনের মধ্যেকার দ্বন্ধ যেকোনো সিনেমাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। সিনেমা জগতে এমন কিছু খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়কারী অভিনেতা আছেন যারা দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই সমস্ত খলনায়কদের সহধর্মিনী (Vilain’s Wife) কারা ?
সেরা ১০ ভিলেন চরিত্র (Best 10 Vilen’s character)
অমরীশ পুরী (Amrish Puri)
বলিউডের এই বর্ষীয়ান প্রয়াত অভিনেতা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এই অভিনেতা দর্শকমহলে সেরা খলনায়ক হিসাবে পরিচিত। তার অভিনয় জীবনের বিশেষ কিছু খলনায়ক চরিত্র তার জনপ্রিয়তা বহুগুনে বৃদ্ধি করেছে। ‘মোগাম্বো’, ‘শাকাল’, ‘পাশা’ ইত্যাদি চরিত্র তাকে সেরা খলনায়কের তকমা দিয়েছে। এই অভিনেতা ১৯৫৭ সালে উর্মিলা দিবেকারকে (Urmila Diveker) বিয়ে করেন। এই অভিনেতার দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। অভিনেতার ছেলের নাম রাজীব পুরী (Rajiv Puri) আর মেয়ের নাম নম্রতা পুরী (Namrata Puri)। ২০০৫ সালে এই অভিনেতা মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আমজাদ খান (Amjad Khan)
বলিউডের সেরা ভিলেন ‘গব্বর’ হিসাবেই বিশেষত এই অভিনেতার পরিচয় ছিল। ১৯৭৫ সালে নির্মিত জনপ্রিয় সিনেমা ‘শোলে’ তে গব্বরের ভূমিকায় অভিনেতার অসাধারণ অভিনয় তাকে দর্শকের করে তুলেছিল প্রিয় অভিনেতাদের একজন। ইনি বেশিরভাগ ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৭২ সালে এই অভিনেতা শেহলা খানকে (Shaila Khan) বিয়ে করেন। তাদের তিনটি ছেলেমেয়ে আছে, শাদাব খান (Shadaab Khan), সীমাব খান (Seemaab Khan) ও আহলাম খান (Ahlam Khan)। তবে, এই পর্দা কাঁপানো ভিলেন চরিত্রে অভিনয়কারী অভিনেতার ১৯৯২ সালে মাত্র ৫১ বছর বয়সে প্রয়াণ ঘটে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
গুলশান গ্রোভার (Gulshan Grover)
৯০ দশকের খলনায়ক চরিত্রদের মধ্যে বিশেষ একজন হলেন অভিনেতা ‘গুলশান গ্রোভার’। এই অভিনেতা বলিউডে ‘ব্যাড ম্যান’ নামেই বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছেন। বলিউডে অভিনয় জগতে প্রবেশের আগে এই অভিনেতা ‘লিট্ল থিয়েটার গ্রুপ’ এর সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। অসংখ্য হিন্দি সিনেমায় তার খলনায়ক চরিত্র দর্শকের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই অভিনেতা প্রথম ১৯৯৮ সালে ফিলোমিনা গ্রোভারকে (Filomina Grover) বিয়ে করেন। কিন্তু ২০০১ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ২০০১ সালেই তিনি দ্বিতীয়বার কাশিশ গ্রোভারকে (Kashish Grover) বিয়ে করেন কিন্তু, এই দম্পতির সম্পর্কও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০০২ সালে দম্পতি আলাদা হয়ে যান।
কবির বেদী (Kabir Bedi)
বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় এই অভিনেতা শুধু ভারতেই নয় ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালি জুড়ে অভিনয় করেছেন। তিনি বলিউডে বিশেষত ২০০৫ সালে পরিচালক আকবর খান কর্তৃক নির্মিত ‘তাজ মহল’ সিনেমায় ঐতিহাসিক চরিত্র শাহ জাহানের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের কাছে জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়াও তিনি ইতালি ও ইউরোপের টেলিভিশন সিরিজে কাজ করেছেন। জনপ্রিয় ‘জেমস বন্ড’ কর্তৃক একটি সিনেমায় অভিনেতা কাজ করেছেন। এই অভিনেতা চারবার বিয়ে করেছিলেন প্রথম তিনি ১৯৬৯ সালে প্রতিমা গৌরীকে (Protima Gauri) বিয়ে করেন।
তবে ১৯৭৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর দ্বিতীয়বার তিনি ১৯৮০ সালে সুসান-হামফ্রেসকে (Susan Humphreys) বিয়ে করেন তবে ১৯৯০ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি ১৯৯২ সালে তৃতীয়বার বিয়ের জন্য প্রস্তুত হন আর নিকি বেদীকে (Nikki Bedi) বিয়ে করেন। তবে অভিনেতার তৃতীয় বিয়েও স্থায়ী হয় না আর ২০০৫ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিয়েও অটুট না থাকলেও অভিনেতা চতুর্থবার আবারও বিয়ের জন্য প্রস্তুত হন আর ২০১৬ সালে পারভীন দুসাঞ্জকে (Parveen Dusanj) বিয়ে করেছেন। এই অভিনেতার তিন ছেলে মেয়ে ছিল পূজা বেদী (Pooja Brdi),সিদ্ধার্থ বেদী (Siddharth Bedi) ও আদম বেদী (Adam Bedi)। তবে ১৯৯৭ সালে অভিনেতার এক ছেলে সিদ্ধার্থ বেদী মারা গিয়েছেন।
ড্যানি ডেনজংপা (Danny Denzongpa)
হিন্দি চলচ্চিত্র সহ এই অভিনেতা বাংলা, নেপালি, ও তেলুগু ছবিতেও অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তার জনপ্রিয় অভিনীত সিনেমাগুলির মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সিনেমা ‘সেভেন ইয়ার্স ইন তিব্বত’ ছবির অভিনয় তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। এই অভিনেতা বলিউডে মূলত খলনায়ক চরিত্রের জন্য বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়। ১৯৯০ সালে অভিনেতা গাওয়া ডেনজংপাকে (Gawa Denzongpa) বিয়ে করেন। তাদের দুটি ছেলে মেয়ে রিনজিং ডেনজংপা (Rinzing Denzongpa) ও পেমা ডেনজংপা (Pema Denzongpa)।
সদাশিব আমরাপুরকর (Sadashiv Amrapurkar)
হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়কারী এই প্রয়াত অভিনেতা আজও সকল দর্শকের হৃদয়ে জীবিত আছেন, নিজের অভিনীত শ্রেষ্ঠ চরিত্রগুলির জন্য। এই অভিনেতা তার অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন ১৯৮৩ সালে। ১৯৭৩ সালে অভিনেতা সুনন্দা আমরাপুরকরকে (Sunanda Amrapurkar) বিয়ে করেন। তবে দুঃখজনক ভাবে ২০১৪ সালে ৬৪ বছর বয়সে ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের কারণে এই অভিনেতার প্রয়াণ ঘটে, সিনেমা জগৎ থেকে সেরা একজন ভিলেন চরিত্র হারিয়ে গিয়েছেন।
প্রেম চোপড়া (Prem Chopra)
১৯৬৭ সালে অভিনেতার এই অভিনয় জগতে প্রথম ভিলেন চরিত্রে অভিনয় শুরু হয়। ১৯৬০ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে টানা কয়েকবছর এই অভিনেতা নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার কঠিন লড়াই করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই পরিশ্রমের কারণে এই অভিনেতাও নিজের অভিনয় জীবনে সেরা খলনায়কের চরিত্রের তকমা লাভ করেছেন। তার খলনায়ক চরিত্র দর্শককে আতঙ্কিত করেছে। ১৯৬৯ সালে এই অভিনেতা উমা চোপড়ার (Uma Chopra) সাথে গাঁটছড়ায় আবদ্ধ হন। অভিনেতার তিন কন্যা সন্তান আছে। প্রেরণা চোপড়া (Prerana Chopra), পুনিতা চোপড়া (Punita Chopra) ও রকিতা চোপড়া (Rakita Chopra)।
রঞ্জিত বেদী (Ranjeet Bedi)
বড়ো পর্দায় অভিনয়ের পাশাপাশি এই অভিনেতা বেশ কিছু সিরিয়ালেও কাজ করেছেন। এই অভিনেতা কেবল রঞ্জিত নামেই ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত। হিন্দি ও পাঞ্জাবী ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এই অভিনেতাকেও দর্শক খলনায়ক হিসাবে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করেন। এই অভিনেতা তার অসাধারণ অভিনয় দিয়ে সেরা খলনায়কের তালিকায় নিজের বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। প্রায় ১০০ তার উপরে সিনেমায় এই অভিনেতা অভিনয় করেছেন। এই অভিনেতা অলোকা বেদী (Aloka Bedi) ওরফে নাজনীনকে বিয়ে করেন। অভিনেতার দুই ছেলে মেয়ে জিভা বেদী (Jeeva Bedi) ও দিব্যাঙ্কা বেদী (Devyanka Bedi)।
প্রকাশ রাজ (Prakash Raj)
এই পরিচিত খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়কারী অভিনেতা হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে সমান তালে নিজের জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি উভয় ইন্ডাষ্ট্রিতেই সেরা ভিলেন হিসাবে পরিচিত। এই অভিনেতা তামিল, তেলেগু, কান্নাডা ও মালায়লাম ভাষাতেও সিনেমা করেছেন। ১৯৯৪ সালে লালিথা কুমারীর (Lalitha Kumari) সাথে অভিনেতা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন, কিন্তু এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়না, ২০০৯ সালে এই দম্পতির বিচ্ছেদ হয়। তবে ২০১০ সালে অভিনেতা এক নৃত্যশিল্পী পনি ভার্মাকে (Pony Verma) দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। অভিনেতার তিন সন্তান মেঘনা রাই (Meghna Rai), পূজা রাই (Pooja Rai) ও সিধু রাই (Sidhu Rai)।
মুকেশ ঋষি (Mukesh Rishi)
এই অভিনেতা অভিনয় জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন ১৯৮৮ সালে। এই অভিনেতা কেবল হিন্দি চলচ্চিত্রেই নয়, হিন্দি সহ মোট আটটি ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অসংখ্য সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। এই অভিনেতাও সিনেমা জগতে ভিলেন চরিত্রে জনপ্রিয় একজন। প্রথম জীবনে অভিনেতা একজন মডেল হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তিনি কেশনী ঋষির (Keshni Rishi) সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন। তাদের দুটি ছেলেমেয়ে। তাদের ছেলে রাঘব ঋষি (Raghav Rishi) বর্তমানে একজন অভিনেতা।