এই গরমে দুপুরে অনেকেই তরমুজ খেতে পছন্দ করেন। কারণ তরমুজ খেলে যেমন সামান্য খিদে ও তৃষ্ণা মেটে তেমনি বেশ খানিকটা তৃপ্তিও হয়। আবার শুধুই যে তরমুজ তা কিন্তু নয় অনেক সময় তরমুজের রস কিনতে পাওয়া যায়। সেটাও কিনে খায় অনেকে। সাধারণত এই তরমুজ লাল বলেই চেনেন সকলে। তরমুজ বেশ গাঢ় লাল হলে তবেই সেটা খেয়ে মজা। কিন্তু এবার লাল নয় হলুদ সবুজ রংবেরঙের তরমুজ (Colourful Watermelon) তৈরী করে ফেলেছেন এক চাষী।
হ্যাঁ, ঠিকই দেখছেন তরমুজ তাও আবার কখনো হলুদ, কখনো সবুজ তো কখনো বেগুনি। এমন আশ্চর্য কাজ সম্ভব করে দেখিয়েছেন বর্ধমানের এক চাষী। তার এই অভিনব রংবেরঙের তরমুজ (Colourful Watermelon) দেখে রীতিমত তাক লেগে গিয়েছে স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে নেটিজেনদের। আর শুধু কালারই নয় সাথে আনারস থেকে স্ট্রবেরী স্বাদ মিলছে তরমুজ খেয়েই।
এমনই কিছু প্রজাতির তরমুজ চাষ করছেন পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan) জেলার এক কৃষক হাসিবুল রহমান। তবে এই বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষে তিনি কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করেননা। রোজগারের তাগিদেই তিনি এই বিকল্প চাষ বেঁচে নিয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় খরা বা অতিবৃষ্টির কারণে চাষের ফসল বেশিরভাগটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফলে চাষীরা তাদের পরিশ্রমের তুলনায় সেইরকম লাভ করতে পারছেননা।
রংবেরঙের তরমুজ যা খেলে স্বাদ মিলবে আনারস কিংবা স্ট্রবেরির (colorful watermelon which tastes like pineapple and strawberry)
আর তাই গতানুগতিক চাষবাস এর পাশাপাশি কিছু ভিন্ন বা বলা ভালো বিকল্প চাষের উপায় খুঁজছিলেন ওই কৃষক আর তখনই তিনি পেয়ে যান উপায়। তিনি তরমুজের চাষ শুরু করেন। গরমকালে তরমুজের চাহিদাও প্রচুর। কৃষক হাসিবুল রহমান আমাদের পরিচিত তরমুজের পাশাপাশি চাষ করতে থাকেন আরও বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজের। এই ভিন্ন প্রজাতির তরমুজের বীজ কৃষক বিদেশ থেকে কিনে আনিয়েছেন।
ব্যবসাকে লাভজনক করে তোলার জন্যে তিনি বিদেশের উচ্চফলনশীল ৫-৬ ধরণের তরমুজের বীজ আনান এবং তা চাষ করে তিনি বেশ লাভদায়ক মুনাফাও অর্জন করেছেন। তার মতে, গরমে তরমুজের চাহিদা তো থেকেই। তবে তরমুজের ভিতরে যে ভিন্ন স্বাদ ক্রেতা পাচ্ছেন তার ফলে এই তরমুজের চাহিদা বেড়েছে প্রচুর পরিমানে। প্রায় ৮ বিঘা জমিতে কৃষক হাসিবুল রহমান (Hasibul Rahaman) নিজের এই তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি এই বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষ করে তিন মাসে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার তরমুজ বেচেছেন।
ভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষের অনুপ্রেরণা (Inspired for farming diffrent watermelons)
ওই কৃষক জানান, তিনি এই ভিন্ন প্রজাতির তরমুজ (Watermelon) চাষের জন্য এক কৃষিবিজ্ঞানীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। কিছু বছর আগে খড়্গপুর আই আই টির (IIT) এক কৃষিবিজ্ঞানী এই চাষের অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন তাকে। তারপর তিনি ধীরে ধীরে আরোহী, আনমোল, জান্নাত গোল্ডেন রেজালা, ও বিশালা নামক প্রজাতির তরমুজ চাষ করতে থাকেন। অনেকে তাকে নিয়ে উপহাসও করেছিলেন কিন্তু তার সফলতা তাদেরকেও বাধ্য করেছে এই চাষ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের যন্ত্রণায় নাজেহাল দশা! বাড়িতে ট্রাই করুন এই সহজ টিপস, ফল পাবেন হাতেনাতে
বর্তমানে অনেকেই হাসিবুর রহমানের কাছে এই চাষ সম্পর্কে তথ্য জানতে আসেন। কৃষক হাসিবুর রহমান তার এই ভিন্ন প্রজাতির চাষ করা তরমুজ কেবল বর্ধমানের নয় বরং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা সহ বিদেশেও রপ্তানি করছেন। তরমুজের এই ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আরোহী প্রজাতির তরমুজের ভিতরটা হলুদ আর স্বাদ আনারসের পাওয়া যায়। আর আনমোল প্রজাতির তরমুজের ভিতরটা সবুজ রঙের যাতে স্বাদ পাওয়া যায় স্ট্রবেরির।