উত্তম-সুচিত্রা? উত্তম-মাধবী? উত্তম-সুপ্রিয়া? উত্তম-অপর্ণা? না কোনোটাই মিলছে না। উত্তমের পর যেন সুচিত্রাটাই পারফেক্ট। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ক্লাসিক জুটি হল উত্তম কুমার (Uttam Kumar) ও সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। আর উত্তম-সুচিত্রা মানেই হল ‘সপ্তপদী’। এই সপ্তপদী সিনেমায় বাইকে বসে উত্তম-সুচিত্রার সেই পর্দার যুগান্তকারী রোমান্স। আর সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে ‘ এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলোতো। ‘ এই রোমান্টিক দৃশ্য অনুভব করার জন্যই বোধ হয় আজও মানুষ এই সিনেমা এখনও দেখেন।
কিন্তু এই রোমান্টিক দৃশ্যের পিছনের গোপন রহস্য জানেন ? কি মনে হয় আপনাদের মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) আর মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen) সেদিন ওই বিএমডব্লিউ বাইকটিতে চড়ে শ্যুটিং করেছিলেন ? ভাবছেন এত বছর এই সিনেমা দেখার পর হঠাৎ গোয়েন্দার মত এমন প্রশ্ন কেন? তাহলে কি সর্ষেতেই ভূত ? হ্যাঁ সর্ষেতেই ভূত। আমরা পর্দায় রিয়ালিস্টিক দেখলেও এটা আসলে নকল। উত্তম-সুচিত্রা সেদিন ওই বিএমডব্লিউ বাইকটিতে চড়েননি।
চলচ্চিত্র সমালোচক স্বপন কুমার মল্লিক ‘মহানায়ক রিভিজিটেড: দ্য ওয়ার্ল্ড অফ উত্তম কুমার’ নামক একটি বই লেখেন, তাতে তিনি এই রোমান্টিক দৃশ্যের পিছনের লুকিয়ে থাকা গোপন রহস্যের উদঘাটন করেছেন। পরিচালক কৃত্রিম ভাবে এই দৃশ্যের শুটিং করেছিলেন। এই পুরো শটে আসল চরিত্রের জায়গায় রাখা হয়েছিল একাধিক ডামি অর্থাৎ নকল মানুষ। অর্থাৎ সেদিন মহানায়ক ও মহানায়িকা ওই বাইকে চড়েইনি। ভাবুন পরিচালকের কি দক্ষতা। এত সুন্দর ভাবে এই দৃশ্য আমাদের সামনে ফুটিয়ে তুলেছেন, কখনও মনেই হয়নি এটা নকল।
স্বপন মল্লিকের বইতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা আছে। এমনকি উত্তম কুমারের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায় নিজে একথা জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমে। একটি গ্রামে লম্বা রাস্তায় বসানো হয়েছিল এই বিএমডব্লিউ বাইক। আর এই বাইকেই চাপানো হয় একাধিক ডামিদের। এইভাবেই হয় শ্যুটিং।
এই সিনেমায় যে বাইকটি দেখানো হয়, সেটি একটি গ্যারেজের বাইক। শ্যুটিং এর সময় সেখান থেকে নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বাইকটি ব্যবহৃত হয় ২০০৮ সাল পর্যন্ত। কোনও এক জার্মান নাগরিক এই বাইকটিকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন। সেখান থেকে এই বাইক এক স্মরণীয় ইতিহাস রচনার অংশ হয়ে ওঠে।