সন্ধ্যা হলেই টেলিভিশনের পর্দায় আমাদের বাড়ির মা কাকিমাদের টিভির সামনে বসতে দেখি। অধীর আগ্রহের সহিত তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ধারাবাহিক গুলো দেখে। কোনো কোনো বাড়িতে পরিবারের আট থেকে আশি সবাই বসে যায় ধারাবাহিক দেখতে। আবার কোনো কোনো পরিবারের মহিলা সদস্যরায় বসে দেখতে থাকে। আবার কোনো কোনো পরিবারে, বিশেষ করে আধুনিক যুগের পরিবার, অর্থাৎ ছোটোখাটো তিনজনের পরিবারে দেখা যায় টিভির ধারে কাছেই নেই তারা। তাহলে কী তারা টিভি দেখে না?
হ্যাঁ দেখে, তবে ধারাবাহিক (Serial) নয়। কিন্তু ধারাবাহিক দেখা নিয়ে কেন এই ভিন্নতা? কেন সবার মিল নেই? আগেকার দিনে যখন সাদা কালো টিভি ছিল, তখন ছিল দূরদর্শন। সেই দূরদর্শনের ধারাবাহিক তো সব পরিবারের আট থেকে আশি বয়সের মানুষরা দেখতে। তাহলে আজ কেন ভিন্নতা? অনেক পরিবার আছে, যারা তাদের সন্তানদের ধারাবাহিক দেখতে মানা করেন। কিন্তু কেন?
আসলে যুগ পাল্টায়। সাথে সাথে আসে নতুন প্রজন্ম। প্রতিটি প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা আলাদা যেমন, তেমনই পছন্দও আলাদা। আধুনিকতার সাথে সাথে মানুষের কাছে এসেছে ফোন। আজ নবাগত প্রজন্মরা স্মার্ট। তাদের এই ফোনেই রয়েছে যাবতীয় কিছু। এই ফোন তাদের খেলার সঙ্গী, একাকীত্বের সঙ্গী, আনন্দের সঙ্গী। আগেকার দিনে মনখারাপ হলে মানুষ একটু সিনেমা দেখে আসত, কিংবা পরিবারের সাথে আড্ডা দিতে দিতে ধারাবাহিক দেখত। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের সাথী এই ফোন। তাদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম গুলো। তাই তাদের কাছে ধারাবাহিক গুলো ছাপোষাই লাগে।
এছাড়াও এখন টেলিভিশনে রয়েছে নানান রকমের ধারাবাহিক চ্যানেল। ফলে মানুষ কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে। এতগুলো চ্যানেলের ভিড়ে মানুষ কনফিউজড। আগে তো এত চ্যানেল ছিল না, একটাই চ্যানেল ছিল দূরদর্শন। তাই মনও স্থির থাকত। অপশন ছিল না, এত। ছিলনা ওটিটি। ছিলনা স্মার্ট ফোন। তাই প্রতিদিনের বিনোদনের রসদ খুঁজতে তারা বসে পড়ত দূরদর্শনের সামনে।
আগেকার ধারাবাহিকের একটা নিটোল গল্প ছিল, ছিল বাস্তব যুক্তিসঙ্গত কাহিনী । ছিলনা গল্পের গোরু গাছে ওঠার মতো চিন্তাভাবনা। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত হত কাহিনী, কিংবা ঐতিহাসিক সংগ্রামের কাহিনী। কিন্তু বর্তমানে ধারাবাহিক গুলোতে দেখা যায়, পারিবারিক সমস্যা, কূটকাচালী, প্রেম-পরকীয়া ইত্যাদি। তাই বলে এটা নয় যে আগেকার ধারাবাহিকে ছিল না এগুলো, অবশ্যই ছিল, কিন্তু যুক্তিসঙ্গত পারিবারিক কাহিনী ছিল। তাই তো সেই সব ধারাবাহিক আট থেকে আশি সকলেই দেখত। কোনো বারণ ছিল না বাচ্চাদের।
বর্তমানের ধারাবাহিক গুলোর এই অবস্থার জন্যই মানুষ সন্তান দের দেখতে দিতে চায়না, আবার কিছু মানুষ বাংলা ধারাবাহিক নৈব নৈব চ বলে তিরস্কার জানান। আসলে এখনকার ধারাবাহিকের একটাই লক্ষ্য টিআরপি। এর জন্য তারা যা কিছু করতে পারেন, তাতে মানুষ কি শিখল সেটা দেখে না। কিন্তু আগেকার ধারাবাহিকের এই চিন্তাভাবনা ছিলনা। মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার সাথে সাথেই মানুষকে বিনোদন দিত।