কীর্তন বাংলার ঐতিহ্য। ভগবানের প্রতি নিজের মনের ভাব সমর্পনের এক অনন্য ভাষা কীর্তন (Kirtan)। আজও গ্রামে গঞ্জে কীর্তনের চল অহরহ। তবে শহরেও এখনও পুরোপুরি কীর্তন গানের বিলুপ্তি ঘটতে দেখা যায়নি। শহরের বহু মানুষ কীর্তন শুনতে ভালোবাসেন। তবে, আজকাল আমরা ডিজে, হিপহপ এইসব শুনতেই বেশি আগ্রহী। তাই সেই দিন হয়তো খুব দূরে নেই যখন বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী গানের প্রকার হারিয়ে যাবে আধুনিকতার ভিড়ে।
তবে কীর্তন শুনলে মনে এক আলাদা প্রশান্তি বিরাজ করে। কীর্তনের মাধ্যমে ভগবানের প্রতি সমর্পিত প্রতিটি শব্দ মনে আলাদা অনুভূতির সঞ্চার করে। আর তাই এই সুন্দর গানের প্রকারটিকে বাঁচিয়ে রাখতে কীর্তনিয়া দলগুলি বিভিন্ন রকম প্রয়াস করতে থাকেন। তারা তাদের শিল্পে নতুনের ছোঁয়া মিশিয়ে শ্রোতাদের মনে এই গানের প্রতি ভালোলাগা সঞ্চার করার প্রয়াস করতে থাকেন সর্বদাই।
আগে কীর্তন শোনা যেত কেবল তার নিজের নির্দিষ্ট এক ছন্দে। কিন্তু বর্তমানে কীর্তন (Kirtan) গায়ক গায়িকারা নিজেদের সেই চেনা ছন্দে গাওয়া কীর্তন ছেড়ে তাতে আধুনিকতার ছোঁয়া মেশাতে চেষ্টা করেন। বর্তমানে বেশিরভাগ কীর্তনের আসরেই আধুনিক গানের সুরে কীর্তন শোনা যায়. যা শুনতে খুব একটা খারাপও লাগেনা। আধুনিক মানুষদের কীর্তনের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। গানের তালে নেচে নেচে এক আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি করা হয় কীর্তনের আসরে।
তবে, কীর্তনে এই আধুনিকতার ছোঁয়া সকলের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। একদল মানুষের কাছে এই প্রয়াস সমাজের অবক্ষয়ের সূচনা। ধর্মীয় সমাজ কীর্তনের এইরূপ প্রকাশ মেনে নিতে প্রস্তুত নন। তাদের মোতে, কীর্তনের এই প্রকার নিদর্শন নাকি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে বলে তাদের দাবি।
সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়ে পড়ছে। যে ভিডিওটি দেখে একাংশ নেটিজেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন, তারা দাবি করেছেন কীর্তনের এইরূপ নিদর্শন সমাজের অবক্ষয়, তাই অবিলম্বে এইরূপ নিদর্শন বন্ধ করতে হবে। ভিডিওটিতে একটি মহিলা কীর্তন দল আসরে আধুনিক গানের সুরে কীর্তনের তালে কোমর দুলিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় পাগলের মতো নেচে চলেছেন।
কীর্তনের আসরে এই রকম নাচ দেখে নেটিজেনরা তাদের কটাক্ষ করেছেন। অশ্লীল বলে মন্তব্য করেছেন। ভিডিওটি যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে একাংশ মানুষ রেগে গিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে চলেছেন আর কীর্তনের এই নতুন ভার্সন বন্ধ করার দাবি তুলেছেন।