ইন্ডাস্ট্রি জগতের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (Anindya Chatterjee)। যাকে বর্তমানে আমরা দেখছি গাঁটছড়ার রাহুল হিসেবে। এই অভিনেতার জীবনটা যদি ফিরে দেখা যায়, তাহলে দেখা মিলবে, অভিনেতার জীবনের ভয়ংকর সময়। সেই ভয়ংকর সময় থেকে পেরিয়ে যেভাবে তিনি ফিরে এসেছেন জীবনের মূলস্রোতে, তা ভাবায় যায়না। তিনি ফিরে এসে দেখিয়েছেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়। সম্প্রতি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে একটি বহু বছরের পুরোনো ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘এই ছবিটা সম্ভবত ২০০৪ কিংবা ২০০৫ সালের একটি ছবি।
তখন আমি মাদক সেবন করতাম। আমার শরীরে কোন শিরা অবশিষ্ট ছিল না, আমার বন্ধুরা আমার চোখের সামনে মারা গিয়েছিল…প্রায় ১৫ বছর হল আমি এসব থেকে অনেক দূরে। আমি বিস্মিত কিভাবে এই নরকের গর্ত থেকে বেঁচে ছিলাম? সত্যিই জীবনে কোনো চমৎকার কিছু ঘটেছে। আমি এই চমৎকারকে বিশ্বাস করি।’ আসলে অভিনেতার এমন এক সময় গেছে, ৬/৭ বছর ধরে তিনি কখনও বাইরে নেশা করেছেন, আবার কখনও নেশার জন্য রিহ্যাব সেন্টারে।
আবার বাইরে বেড়িয়ে আবার নেশা। এভাবেই তার কেটেছিল ৬/৭ বছর। শুধু নেশা নয়, নেশার টাকা জোগানের জন্য করেছিলেন চুরি। বাড়িতে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম,কাঁসার যা জিনিস থাকত সব বিক্রি করে টাকা নিয়ে নেশায় মগ্ন থাকতেন। অভিনেতার কথায়, ‘লোহা, অ্যালুমিনিয়াম,কাঁসার জিনিস তখন আমার কাছে সোনার মতনই দামী । যে কোনো গাড়ির লক খুলতে লাগতো ঠিক তিন মিনিট । একটা নোকিয়ার মোবাইল মানে ক্যাশ ২/৩ হাজার । সেটাই অনেক তখন আমার কাছে ।
এরম একটা সময় আমি আমি বুঝতে পারছিলাম এভাবে যদি চলতে থাকে আমি ২৮ বছর অবধিও টানতে পারবো না আর চোখের সামনে চারটে ইউজিং পার্টনার কে পরপর মরতে দেখে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম । এতটাই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলাম যে আমার সেই রিহ্যাবে যাওয়া আর সেখানে আবার কয়েকমাস চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। যদি থাকতো তাহলে আরো কয়েকদিন টানতে পারতাম । কিন্তু পারিনি।’
View this post on Instagram
এমনকি যখন আমি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করি, তখনও পরিবার , আত্মীয় -পরিজন থেকে প্রতিবেশী কেউ বিশ্বাসই করেনি আমি নেশা ছেড়ে দিয়েছি। তাদের বিশ্বাস করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে গেল। আজ প্রায় ১০ বছর হল নেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন তিনিই আইডিয়াল কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি ড্রাগ ক্যাম্পেনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর তিনি।
View this post on Instagram
এভাবেই তার জীবনের শুরু আর তার জীবনের শেষ হয়েছিল। এখন তিনি ড্রাগের নেশা থেকে মুক্ত। জীবনকে চিনেছেন নতুন ভাবে। বর্তমানে তিনি সকলের জীবনের অনুপ্রেরণা। এভাবেও যে ফিরে আসা যায়, এই কথার সার্থকতা দেখিয়েছেন। এখন তিনি চুটিয়ে অভিনয় করছেন। বড় পর্দাতেও কাজ করেছেন, ‘বেলাশুরু’, ‘বেলাশেষে’, ‘দ্য পার্সেল’, ‘কড়াপাক’, ‘অন্দরকাহিনি’র মতো ছবিতে।