লেখার টেবিলের পাশে বইয়ের সমাহার অমিতাভ ঘোষের ‘ফ্লাড অফ ফায়ার’, সুনীলের ‘সেই সময়’, হামিদ কুরেশি, মতি নন্দীর ‘বিজলিবালার মুক্তি’। এইসমস্ত বই পড়ে কল্পনা শক্তিকে প্রখর করে তুলেছেন, তাঁর কলমের যাদুতেই সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক বিখ্যাত চরিত্র। এইসব চরিত্র দেখে মুগ্ধ হন বাংলার দর্শকরা। সেইসব চরিত্রের সাথে নিজেদের জীবনকে মেলায়, তাঁর দুঃখে হাসে, কাঁদে। এই যাদুর কাঠি যার হাতে তিনি হলেন, লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (Leena Ganguly)।
সকলেই প্রায় তাঁর নাম জানেন, তাঁর লেখনীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন সকলেই। তার লেখা গল্পগুলি ভীষণ ভাবে বাস্তবমুখী। ছোটো থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল। পাশাপাশি ছিল সাহিত্যচর্চা। ক্লাস সিক্সেই তিনি গল্প লিখেছেন। শৈশবে কমলা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, এরপর সিস্টার নিবেদিতা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুল জীবন পার করে, বাংলা বিষয় নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্নাতক হন, এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
আর পাঁচটা মেয়ের মত, পড়াশোনা শেষ করেই কলেজে অধ্যাপনা করতে শুরু করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে থাকেন। এইভাবেই চলছিল সময়টা। এর মাঝেই হঠাৎ তাঁর কাছে আবদার এল তখন সালটা ২০০৪। ‘সোনার হরিণ’ ধারাবাহিকের জন্য লিখতে হবে, তিনি না করলেননা, লিখেই ফেললেন স্ক্রিপ্ট।
ধারাবাহিকটি ETV বাংলাতে সম্প্রচারিত হত। ৪৫০ এপিসোডে যখন ধারাবাহিকটি পৌঁছে গেছে, তারপর 1800 এপিসোড পর্যন্ত লিখে গিয়েছিলেন। এরপর লিখলেন, ‘চেনা-অচেনা’, দূরদর্শনের ‘সীমানা ছাড়িয়ে’ ধারাবাহিকের জন্য লিখলেন, ব্যস কামাল এইভাবেই শুরু হল পথচলা। অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে একের পর এক ধারাবাহিকের স্ক্রিপ্ট লিখতে শুরু করেন।
‘ইষ্টিকুটুম, ‘জল নুপুর’, ‘ইচ্ছেনদী’, ‘ফাগুন বউ’, ‘শ্রীময়ী’, ‘মোহর’ সহ বর্তমান সময়ের ধারাবাহিকের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। বর্তমানে তিনি ধুলোকণা, গুড্ডি, সহ আরও অনেক ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যকার তিনি। যে মেয়েটি কোনো কালেই ধারাবাহিক দেখেননি, ধারাবাহিকের সাথে তাঁর দূর দূর পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক ছিলনা।
এমনকি বাড়িতে যখন সবাই ধারাবাহিক দেখতেন, তখন তিনি খবরের চ্যানেল দেখতেন, এই মেয়েই কিনা আজ বাংলার দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করছেন। মধ্যরাত পর্যন্ত প্রযোজকদের সাথে মিটিং করছেন, তাঁর অফিসে অভিনেতাদের ঢল। তাঁর এই পথচলা সকল মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।