গল্পের ছলে আমরা অনেক সময় বলতাম ‘চাঁদে গিয়ে ঘর বানাব’। এটা নিছকই রসিকতার ছলে বলা হত, কিন্তু কখনো কেউ ভাবতে পারেনি এই চাঁদে মানুষ সত্যি সত্যিই পৌঁছাতে পারবে। আজ এই রসিকতার কথাটাই বাস্তবে পরিণত হল। ১৪ ই জুলাই দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) উড়ে গিয়েছিল চাঁদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সেই যাত্রা আজ সফল। ২৩ শে আগস্ট বুধবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে অবতরণ শুরু হয়।
ঘড়ি ধরে ৬টা ০৩-এ চাঁদের জমিতে পাখির পালকের মতো ভাসতে ভাসতে নেমে পড়ল চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। খাওয়া- দাওয়া , ঘুম ত্যাগ করে ইসরোর বিজ্ঞানীদের ৪০ দিনের পরিশ্রমের পর এই সাফল্য মিলল। সারাদেশ এই খুশির আনন্দে ডগমগ। চারিদিকে পুড়ছে আতশবাজি। এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন সফল ভাবে চাঁদে পদার্পণ করেছিল। তবে এই তিন দেশের পর চতুর্থ তালিকায় নাম উঠল ভারতের। তবে দক্ষিণ মেরুতে কেউই পৌঁছাতে পারেনি।
বিশ্বের মধ্যে ভারত এখানে প্রথম প্রবেশ করল যা সত্যিই গর্বের। কেমন ছিল চাঁদে পৌঁছানোর যাত্রাপথ? ১৪ জুলাই চন্দ্রযান-৩ যাত্রা শুরু করে। ধীরে ধীরে পৃথিবীর টান থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে। একের পর এক কক্ষপথ অতিক্রম করে। ১৫ ই জুলাই প্রথম কক্ষপথ অতিক্রম করে, ১৭ ই জুলাই দ্বিতীয় কক্ষপথ অতিক্রম করে। এরপর ১৮ জুলাই তৃতীয়, ২০ জুলাই চতুর্থ এবং ২৫ জুলাই পঞ্চম কক্ষপথ। ৩১ শে জুলাই কক্ষপথ ছেড়ে পাড়ি দেয় চাঁদের উদ্দেশ্যে।
৫ ই অগস্ট প্রবেশ করে চাঁদের উদ্দেশ্যে। ৩১ শে জুলাই থেকেই বিজ্ঞানীদের উৎকন্ঠা ছিল, সামান্য ভুল হলেই চাঁদে পা দিতে পারবেনা তাঁরা। কিন্তু সেইসব ভয় কাটিয়ে প্রবেশ করেন কক্ষপথে। এরপর ধীরে ধীরে ধীরে পাক খেতে খেতে গতি কমাতে থাকে। ৬ অগস্ট দ্বিতীয় কক্ষপথে প্রবেশ করে। ১৭ অগস্ট অবতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। রোভার প্রজ্ঞানকে পেটে নিয়ে চাঁদে ল্যান্ড করে। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ছিল বিক্রম। দক্ষিণ মেরুতে জমি খোঁজার কাজ শুরু করে। জমি খুঁজতেই সময় চলে যায়।
উপযুক্ত জমি খুঁজে পেয়ে ২৩ শে আগস্ট রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে অবতরণ করে। এরপর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিট নাগাদ চাঁদের মাটিতে প্রবেশ করে চন্দ্রযান-৩। চারিদিকে আনন্দের বন্যা। এরপরই শুরু হবে আসল কাজ। ২০১৯ সালে ২২ জুলাই উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল চন্দ্রযান-২। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সকলেই ভেঙে পড়েন। কিন্তু দমে যাননি। সেই ব্যর্থতার পর পুরোদমে লেগে পড়লেন চন্দ্রযান-৩ নিয়ে। সরকারের কাছ থেকে ৭৫ কোটি টাকা সাহায্য চাওয়া হয়। কেন্দ্র সেই সাহায্য দিলে কাজ শুরু করে ইসরো। ১৬ হাজার ISRO বিজ্ঞানীদের সহায়তায় তিন বছর সময় নেয় চন্দ্রযান-৩ কে প্রস্তুত করতে। এর বাজেট ৬১৫ কোটি টাকা।