সিনেমাপ্রেমী দর্শক সারাবিশ্বে আছেন। সিনেমা দেখতে পছন্দ করেননা এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। সিনেমায় কেউ সিনেমার গল্প ভালোবাসেন, কেউ প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দেখতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ তো সিনেমার অন্ধ ভক্ত হয়ে যান। সিনেমায় ব্যবহৃত ডায়ালগ ( Dialogue ) মুখস্ত করে রাখেন। সিনেমায় এমন কিছু ডায়ালগ ব্যবহারও হয় যেগুলো মানুষের মনে গেঁথে যায়। আবার এমন কিছু ডায়ালগ থাকে যেগুলো সমাজের পক্ষপাতিত্বের ছবি তুলে ধরে। নারীদের দুর্বল প্রতিপন্ন করে।
সিনেমায় এমনই কিছু নারী বৈষম্যমূলক ব্যবহার হওয়া ডায়লগ ( Dialogue ) নিয়ে আলোচনা করব। যে ডায়ালগ গুলো নিয়ে অনেক বিতর্ক হওয়ার পরেও বারংবার কোনো না কোনো ভাবে সেইরূপ ডায়ালগই সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন – ‘পেয়ার সে দে রহে হ্যায়, রাখ লো, ওয়ার্না থাপ্পড মার্কে ভি দে সক্তে হ্যায়’, ‘মীনাক্ষী তুম ওয়াহা কাজ না করোগি’, ‘আকেলি লডকি খুলি তিজোরি কে তারাহ হোতি হ্যায়’ ইত্যাদি ডায়ালগ গুলি সমাজে এক বিরূপ ছাপ ফেলে নারীদের প্রতি।
১. ‘আগার মেন উসে নাহি পাকড পায়া, তো মেন হাথোঁ ম্যা চুরিয়াঁ পেহান লুঙ্গা’
এই ডায়ালগটি বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘সত্যমেব জয়তে ২ (Satyameva Jayate 2)’ এর। এই একটি অ্যাকশন মুভি। এই সিনেমাটিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা জন আব্রাহামকে (John Abraham)। অভিনেতার বিপরীতে ছিলেন অভিনেত্রী দিব্যা খোসলা কুমার (Divya Khosla Kumar)। এই ছবিতে একটি অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনেতাকে এই ডায়ালগটি বলতে শোনা গেছে। এই ডায়ালগের মধ্যে দিয়ে এটা স্পষ্টত বোঝায় যে চুড়ি পড়া দুর্বলতার লক্ষণ। এই সিনেমার উক্ত ডায়লগের প্রতি নেটাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ হাতে চুড়ি পড়া মানেই সেই হাত দুর্বল এটা খুবই ভুল ধারণা। কারণ, ইতিহাস সাক্ষী আছে নারী বিদ্রোহিনীর, নারীর সফল যোদ্ধা হওয়ার অনেকও কাহিনী নিয়ে। তাদের মধ্যে যেমন- ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ।
২. ‘মেরে পাস্ পেন নেহি হ্যায়……….মেরে পাস্ ভি পেন নেহি হ্যায়’
উক্ত ডায়ালগটি ও.টি.টি. প্লাটফর্মের একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘প্যাগলাইট (Pagglait)’ এর। এটি একটি বিধবা নারীর স্বাধীনচেতা হওয়ার উপলব্ধির কাহিনী নিয়ে নির্মিত। এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, সানিয়া মালহোত্রা (Sanya Malhotra)। এই চলচ্চিত্রের উক্ত সংলাপটি নেটপাড়ায় বিতর্কের ঝড় সৃষ্টি করেছিল। এই সংলাপ একজন স্ত্রীকে অর্থচালনার দিক দিয়ে যোগ্য না মনে করার প্রমান দেয়। কারণ, উক্ত ডায়ালগটি চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি বিশেষ দৃশ্যে যেখানে বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর বীমার অর্থ পেতে সাক্ষর করার জন্য কলমের প্রয়োজন হলে কেউ তাকে কলম দিতে চাইছে না, বলছে কলম নেই তাদের কাছে। এটি বাস্তব গৃহের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে দর্শকের সামনে।
৩. ‘মীনাক্ষী তুম ওয়াহা জব নেহি করোগি’
উক্ত ডায়ালগটি ও.টি.টি. প্লাটফর্মের অপর একটি জনপ্রিয় মুভি ‘মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর (Meenakshi Sundareshwar)’ ছবির। এই ছবিতে মীনাক্ষীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী ‘সানিয়া মালহোত্রা (Sanya Malhotra)’, সানিয়ার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ‘অভিমন্যু দাসানি (Abhimanyu Dasani)’। এই ছবিতে উক্ত সংলাপটি বলেছেন ছবির চরিত্র মীনাক্ষীর শশুর মীনাক্ষীকে। কারণ, মীনাক্ষীর শশুড়বাড়ির লোকজন তাকে চারিত্রিক ভাবে সন্দেহ করতো। সে, তার এক পুরুষ বন্ধুর চা-বাগানে কাজ করতো বলে। তাকে তার শশুর এমন একটি কথা বলেছিলেন। এই ছবির মূল ভাবনা ছিল পরিবারের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা। কিন্তু এই ছবিটি তার আসল উদ্দেশ্যে পূরণে ব্যর্থ হয়।
৪. ‘ইয়ে সারে পাকওয়ান রানি নে খুদ সে বানায়ে হ্যায়, এমব্রয়ডারি ভি উসি নে কি হ্যায়…’
এই সংলাপটি একটি মা তার মেয়েকে পাত্রপক্ষের সামনে যোগ্য প্রমান করার জন্য ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এই ধরণের কথা একজন নারীর কাছে কিছুটা অপমানজনকই বটে। প্রতিটি মানুষ নিজের ক্ষেত্রে যোগ্য। নারী পুরুষ নির্বিশেষে। একজন নারীকে কেবল তার রূপ আর গৃহকার্যের জন্য বিচার করা উচিত নয়। সবার মধ্যে আলাদা গুন্ থাকে যা এই সংলাপের মধ্যে ক্ষুন্ন হয়েছে। নারীকে ছোট করে সংকুচিত ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ দেখার মানসিকতা এই ডায়ালগে প্রকাশ পেয়েছে। এটি ‘হাসিন দিলরুবা (Haseen Dillruba)’ চলচ্চিত্রের ডায়ালগ। মুখ্য চরিত্রে অভিনীত পাত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী তাপসী পান্নু ও বিপরীতে বিক্রান্ত ম্যাসেই।
৫. ‘মেরি আওরত কো সিরফ মে হি হাত লাগা সাক্তা ”, “ জিস দিন তুমে এহসাস হোগা কে পয়সা সব কুছ নেহি হোতা তো তু মেরে কদম পার আকে গিরেগি’
এটি জনপ্রিয় কমেডি মুভি ‘হাঙ্গামা ২ (Hungama 2)’ এর সংলাপ। এই ছবিতে ‘পরেশ রাওয়াল’, ‘শিল্পা শেঠি’, ‘মিজান জাফরী’র মতো জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছেন। এই সিনেমাটি হাস্যকর সিনেমা হলেও এখানে এমন কিছু সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো একজন নারীর প্রতি চরম অপমানসূচক। এই সিনেমায় উক্ত ডায়ালগটি স্পষ্টত প্রমান করে নারীকে বস্তু রূপে গ্রাহ্য করা হয়েছে। এই সংলাপের মধ্যে দিয়ে এমনটাই প্রতিপন্ন হয় যে, নারী কোনো বস্তু যাকে যখন ইচ্ছে যে কেউ নিয়ে নিতে, বা ছিনিয়ে নিতে পারে।