বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক বর্ষীয়ান উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হলেন হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় (Haradhan Bandopadhyay)। বড় পর্দা থেকে শুরু করে ছোটো পর্দা সবেতেই বিরাজমান। তাঁর অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করে দর্শকদের। তাঁর অভিনয় দেখে এখনও মানুষ ফিল করেন, রিয়েলিটিতে হারাধনকে দেখছেন, পর্দায় নন। এতই সুন্দর ছিল তাঁর অভিনয়। তাঁর পথচলা শুরু হয় স্বাধীনতার পরের বছর। ১৯৪৮ তে অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালিত ‘দেবদূত’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে।
তবে এই অভিনেতা জেলে গিয়েছিলেন। জানেন কেন? ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী ছিলেন তিনি। এই বিপ্লবী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালের ৬ই নভেম্বর বাংলাদেশের কুষ্টিয়া তে। ১৯৪৬ এ তিনি একটি বিমান কোম্পানি তে যোগ দেন, তারপর স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী হিসেবে যোগ দেন। তারপর দেশ স্বাধীনের পর তিনি আসেন অভিনয় জগতে।
এই যে ১৯৪৮ এ এলেন সিনেমা জগতে তারপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপরে একের পর এক বিখ্যাত ছবি করেন। মহানগর, সোনার কেল্লা, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, চৌরঙ্গী, আকাশ কুসুম, দেবী চৌধুরানী, জয় বাবা ফেলুনাথ, ওগো বধু সুন্দরী, জীবন নিয়ে খেলা, পূজা, শ্বেত পাথরের থালা ইত্যাদি।
এছাড়াও তিনি হিন্দি সিনেমাও করেছেন, রণবীর কাপুর অভিনীত বরফি। শুধু বড় পর্দায় নয়, ছোটো পর্দাতেও অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্টার জলসার পর্দায় সম্প্রচারিত ওগো বধু সুন্দরী। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও মঞ্চ শিল্পী হিসেবেও বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন তিনি। উৎপল দত্তের ‘ফেরারি ফৌজ’ নাটকে তাঁর অভিনয় সকলকে ভাবিয়ে তোলেন।
এই অভিনেতা ১৯৬১ সালে সেরা মঞ্চ অভিনেতার জন্য পুরস্কার পান। ২০০৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সহকারি অভিনেতা হিসাবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর ২০১১ তে পান বঙ্গবিভূষণ। এই দক্ষ অভিনেতা নিউমোনিয়া তে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ৫ ই জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার শেষ অভিনীত ধারাবাহিক ছিল স্টার জলসার একসময়ের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ভাষা’। প্রসঙ্গত, ভাষা একটি এমন ধারাবাহিক ছিল যা দর্শকের কাছে এক দাদু ও নাতনির ভালোবাসার মিষ্টি সম্পর্কের উদাহরণ গড়েছিল। ওই ধারাবাহিকে প্রয়াত অভিনেতার অসাধারণ নিখুঁত অভিনয় মন জয় করে নিয়েছিল সকলের। ভাষা ও দাদুর মধ্যেকার সম্পর্কের মিষ্টতা আজও সকলের মাঝে অমলিন থেকে গেছে।