বিজ্ঞান মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিস্তারে সাহায্য করে। বিজ্ঞান জ্ঞানের আলোকে প্রসারিত করে। বিজ্ঞানকে আত্মস্থ করতে পারলে তবেই জীবনের বিকাশ ঘটবে। বিজ্ঞানকে সমান ভাবে জানা, জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মানুষের অধিকার। পরীক্ষার মাধ্যমেই বিজ্ঞানের স্বরূপ প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের জন্য সকলের কাছে প্রয়োজনীয় সুযোগ কি এই দেশে বর্তমানে আছে ?
বিজ্ঞানকে জানার অধিকার সকল ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর আছে। তবে দেশে সাধারণ সুস্থ একজন শিক্ষার্থীর সামনে যে সুযোগ আছে। সেই সুযোগ নেই দেশের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের কাছে। প্রযুক্তিগত বিজ্ঞান শিক্ষায় তাই তাদের অংশগ্রহণ খুব স্বল্প পরিমানে। ইচ্ছা থাকলেও পিছিয়ে যেতে হয় তাদের, বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের দৈহিক প্রতিবন্ধকতা। আর সেই দৃষ্টিহীন ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার সব চেয়ে বড়ো কারণ, এই দেশের পিছিয়ে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থা। তাদের জন্য পর্যাপ্ত, নির্দিষ্ট শিক্ষার সু-ব্যবস্থার সুযোগ করে দিতে না পারা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা।
তবে গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড়োসড়ো পরিবর্তনের রেখা টেনে দিয়েছেন এক ২৭ বছর বয়সী দৃষ্টিহীন তরুণী। বেঙ্গালুরুবাসি বিদ্যা ওয়াই আনন্দ (Vidya Y Anand) নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছেন হাজার হাজার দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীকে আলোর নতুন পথ দেখাতে। মনের জোর আর অসামান্য জেদকে সম্বল করে একদিন এই তরুণীর নিজের স্বপ্নপূরণের পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি। নিজের প্রতিবন্ধকতাকে নিজের দুর্বলতা হয়ে উঠতে না দিয়ে ছোট্ট বয়স থেকেই সে তার জীবনে লক্ষ্য পূরণের কঠিন লড়াইটা শুরু করে দিয়েছিলো।
পঞ্চম শ্রেণীতে দৃষ্টিহীনদের বিশেষ বিদ্যালয় ছেড়ে তিনি ভর্তি হন সাধারণদের বিদ্যালয়ে। পড়াশুনার ক্ষেত্রে তাকে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে নিজের প্রচেষ্টা কখনও থামিয়ে দেননি তিনি। বিশেষ করে গণিত ও বিজ্ঞানমূলক বিষয় গুলি বুঝতে তাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। গৃহ শিক্ষকদের উপরের ভরসা করে থাকতে হয়েছে তাকে বেশিরভাগ সময়। তবে তার এই সংগ্রাম তাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। সে তার উচ্চশিক্ষার পরবর্তী ধাপে বিজ্ঞানকেই নিজের সাধনা হিসাবে বেছে নেয়।
আরও পড়ুনঃ হিন্দুদের এক অভিনব উৎসব, রইল বান্ডেলের ভেল ভেল উৎসবের ঐতিহাসিক কাহিনী ও চিত্র
২০১৭ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে বেঙ্গালুরু আইআইটি থেকে স্বর্ণপদক পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। তার শিক্ষাকালীন সময়ে সে কানাডার এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছিল শিক্ষাক্ষেত্রে সরল ভাবে এগিয়ে যেতে। কানাডার সেই সংস্থার শিক্ষা পদ্ধতি বিদ্যার মনে নতুন আলোর সঞ্চার করে। তার মনে নতুন কিছুর অনুপ্রেরণা জাগায়। কানাডার সেই সংস্থার শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্যা বেঙ্গালুরু আইআইটির অধ্যাপক অমিত প্রকাশ এবং গবেষিকা সুপ্রিয়া দে-এর সাথে মিলে ‘ ‘ভিশন এমপাওয়ার (Vision Empower)’ নামক একটি সংস্থা গঠন করে।
এই সংস্থা হাজারও দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীর চোখের আলো হয়েছে। তাদের উদ্বুদ্ধ করছে আর্টসের বাইরে গিয়ে স্টেম কোর্সে পড়ার জন্য। তাদের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার শক্তি এই সংস্থা জোগাচ্ছে। তাদের সমাজের স্রোতে ফিরিয়ে এনে সমাজে পরিবর্তনের রেখা অঙ্কন করে প্রশাসনকে নতুন পথের উদ্ভাবনা দিচ্ছে এই তরুণী বিদ্যা ওয়াই আনন্দ (Vidya Y Anand)।