বড়পর্দায় একসময়ের জাদরেল ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। কিন্তু বর্তমানে তিনি এখন ছোটপর্দায় অভিনয় করছেন। তবে এখন তিনি ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেননা। এখন তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়, আদর্শবাদী বাবার চরিত্রে। ‘মেজ বউ’, ‘সংসার সংগ্রাম’, ‘দাদার আদেশ’, ‘মায়ের আঁচল’, ‘ঘাতক’ প্রভৃতি সিনেমায় তিনি অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর লাল চোখ দেখে ভয় পেয়েছিল সেই সময়ের ছোটো বাচ্ছারা।
কার কথা বলছি জানেন? জগা গুন্ডার কথা বলছি। কে জগা গুন্ডা বুঝতে পারছেন না? যারা ‘মায়ের আঁচল’ সিনেমা দেখেছেন তাঁরা চিনবেন জগা গুন্ডাকে। ২০০৩ সালে মায়ের আঁচল সিনেমায় অভিনয় করার পর জগা গুন্ডার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল । এই জগা গুন্ডা হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী (Shankar Chakraborty)। এছাড়াও বিখ্যাত হয়েছিলেন দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হওয়া ধারাবাহিক ‘বিবাহ অভিযান’ এর তোতলা গনশা চরিত্রে অভিনয়ের পর থেকে।
যিনি বর্তমানে স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘গুড্ডি’ ও ‘ধুলোকণা’ তে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ‘দেশের মাটি’, ‘তিতলি’, ‘কুঞ্জছায়া’, ‘কৃষ্ণকলি’, ‘ফাগুন বউ’ সহ আরও অনেক ধারাবাহিকে। তিনি মোট ১৭ টি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তবে শুধু মাত্র ধারাবাহিক নয়, তিনি বিখ্যাত বিখ্যাত সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন । তিনি মোট ৪৬ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
এই যে এত সাফল্যমণ্ডিত কেরিয়ার জীবন, এই জীবনে আসার পথ এতটাও মসৃণ ছিল না অভিনেতার। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তবে তখন তাঁর নাম শংকর চক্রবর্তী ছিল না, তাঁর নাম ছিল হরনাথ চক্রবর্তী। কিন্তু পরিবারের এমন খারাপ অবস্থা ছিল যে এই পড়াশোনার খরচটাও চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিলনা। কিন্তু তিনি হেরে জাননি।
কখনো চায়ের দোকানে আবার কখনো সাইকেল সারানোর দোকানে কাজ করে পয়সা রোজগার করেছেন। একদিকে পড়াশোনার খরচ, আর একদিকে নিজের খাওয়া-দাওয়ার খরচ জুগিয়েছিলেন। পড়াশোনা করতে করতে তাঁর স্বপ্ন ছিল অভিনয়ের। তাই উৎপল দত্তের নাটকের দলে যোগদান করেন । এরপরই তাঁর কাছে সুযোগ আসে দূরদর্শনের ‘বিবাহ অভিজানের’। এই ভাবেই শুরু হয়েছিল কেরিয়ার জীবন। অভিনয় জীবনেও অনেক সংগ্রাম করেছেন। তিনি খড়দহ থেকে কলকাতায় শ্যুটিং করতে আসতেন।
নব্বইয়ের দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ক্লার্ক এর কাজ করতে করতে দূরদর্শনে নগর পাড়ে রূপনগর,বিবাহ অভিযান সেই সময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। পয়সার অভাবে একসময় আট আনার ছাতু খেয়ে বেড়িয়ে পড়তেন অভিনয়ের শ্যুটিং এ। এমনকি আসার জন্য বাস ভাড়া দেওয়ার পয়সাও থাকত না। মনে স্বপ্ন আর বুকে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন নিজের লক্ষ্যে। তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন, আমাকে এটা করে দেখাতেই হবে, এই জেদ আজ তাঁকে এতটা সাফল্যমণ্ডিত করতে সক্ষম করেছে।