অদক্ষ শ্রমিক হলেও দিতে হবে খোরপোষ, আয়ের মাপকাঠি জানিয়ে রায় হাইকোর্টের

স্ত্রী ও সন্তানের খোরপোশ মামলায় নজির বিহীন এক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বর্তমানে রাজ্যের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করে একজন সক্ষম এবং কর্মক্ষম যুবকের

Antara Nag

calcutta high court

স্ত্রী ও সন্তানের খোরপোশ মামলায় নজির বিহীন এক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বর্তমানে রাজ্যের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করে একজন সক্ষম এবং কর্মক্ষম যুবকের ন্যূনতম আয়ের মাপকাঠি কত হতে পারে তা নির্ধারণ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

এই মামলার রায় দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, একজন কর্মক্ষম যুবক প্রশিক্ষণ হীন কিংবা অদক্ষ শ্রমিক হলেও বর্তমান বাজারে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করা উচিত। তাই ছুটির দিনগুলি বাদ দিয়েও একজন যুবক প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম। তাই কিছুতেই একজন কর্মক্ষম ও যুবক স্ত্রী ও সন্তানের খোরপোষের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না।

নূন্যতম আয়ের মাপকাঠি জানাল হাইকোর্ট

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা সুমন মল্লিককে (আসল নাম নয়) নিম্ন আদালত তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য প্রতিমাসে ৪০০০ টাকা করে খোরপোষের নিদান দেন। কিন্তু সুমন মল্লিক কলকাতা হাইকোর্টে এই নির্দেশকে খারিজ করার আবেদন জানিয়ে মামলা করেন। এই মামলার ওঠে বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার এজলাসে। হাইকোর্টের সুমন মল্লিকের আইনজীবী দাবি করেন যে, নিম্ন আদালত তার মক্কেলের আয়ের পরিমাণ না জেনেই স্ত্রী সন্তানের জন্য খোরপোশের অংক নির্ধারণ করে দিয়েছে। আদতে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত অংকের থেকেও সুমন মল্লিক এর মাসিক ইনকাম কম। তাই মক্কেল কিভাবে এই খোরপোষের টাকা দেবে?

আদালতে উকিলের বক্তব্য

সুমনের উকিল বিচারপতিকে জানান সুমন একজন অদক্ষ বা আনস্কিল্ড লেবার। উত্তর ২৪ পরগনার নিউ বারাকপুরে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন তিনি। তিনি প্রতিদিন ১৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ তার মাসিক ইনকাম ৩০০০ টাকার কাছাকাছি। তার যুক্তির স্বপক্ষে একটি ইনকাম সার্টিফিকেটও আদালতে দাখিল করেন। অথচ নিম্ন আদালতের রায় অনুযায়ী তার স্ত্রী এবং সন্তানকে খোরপোষ দিতে হবে ৪০০০ টাকা প্রতি মাসে। এটা কোনভাবেই সুমনের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের কাছে সুমনের আবেদন এই যে নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করা হোক।

বিরোধী পক্ষের উকিলের বক্তব্য

যদিও আদালতে সুমনের আইনজীবীর এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সুমনের স্ত্রীর আইনজীবী। সুমনের স্ত্রীর আইনজীবীর দাবি, একজন অদক্ষ শ্রমিক হলেও বর্তমান বাজারে একজন সক্ষম যুবক ৪০০০ টাকার থেকে বেশি আয় করতে সক্ষম। এছাড়া স্ত্রী ও সন্তানকে খোরপোষ না দিতে চাওয়ার বাহানায় আদালতে এমন ইনকাম সার্টিফিকেট দাখিল করা হয়েছে।

আদালতের রায়

যথারীতি বিচারপতিঅজয় কুমার গুপ্তা উভয় পক্ষের বক্তব্যই মন দিয়ে শোনেন। তারপর সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের অন্যান্য বিভিন্ন হাইকোর্টের খোরপোষ মামলার একাধিক রায়ের উদাহরণ টেনে বিচারপতি গুপ্তা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গড় আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায়, যতই অদক্ষ শ্রমিক হোক না কেন, যেকোনো কর্মক্ষম যুবকের প্রতিদিনের ইনকাম হওয়া উচিত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ছুটির দিন বাদ দিয়েও মাসিক ইনকাম দাঁড়ায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তাই সেখান থেকে ৪০০০ টাকা স্ত্রী ও সন্তানকে খোরপোষ দিতে না পারার কোন কারণ নেই। তাই কোনোভাবেই একজন পুরুষ তার স্ত্রী ও সন্তানের উপর আর্থিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না।