বাংলায় বর্ষার বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের আকাশে অল্পস্বল্প মেঘ দেখা গেলেও উত্তরবঙ্গের আকাশ এখন পরিস্কারই বলা চলে। সকাল হলেই দেখা মিলছে ঝকঝকে রোদের। উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘাও। প্রবল বৃষ্টিতে ধ্বস নেমে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাস্তা গুলি ও আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া বাকি উত্তরবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে শুরু হয়েছে আগাম বুকিং। এক কথায় বলা যায় দুর্যোগ কাটিয়ে আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছে পাহাড়।
ছন্দে ফিরছে পাহাড়
ইতিমধ্যেই পাঙ্খাবাড়ি, তিনধারিয়া হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা খুলে গিয়েছে। খুলে গিয়েছে টাইগার হিল, শুরু হয়েছে দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনের জয় রাইড। সেবক হয়ে গ্যাংটক যাওয়া না গেলেও লাভা, ডেলো হয়ে যাওয়া যাচ্ছে কালিম্পং, সিকিম। তার উপরে নর্থ সিকিমের লাচুং-জিরো পয়েন্ট, ইস্ট সিকিমের নাথুলাতে শুরু হয়েছে তুষারপাত। ফলে পর্যটক টানতে সমস্ত উপাদানই আস্তে আস্তে মজুদ হচ্ছে পাহাড়ে।
আবারও চালু পাহাড়ের বুকিং
অতি বৃষ্টির ফলে বিপর্যস্ত হয়েছিল মিরিক, বিজনবাড়ি ও সুখিয়াপোখরি। এলাকাগুলি বাদ রেখে ধীরে ধীরে বুকিং হতে শুরু করেছে সিটং, চিমনি, দাওয়াইপানি, তাকদা-তিনচুলে, গোরুবাথান, লাভা, ঝান্ডি, পাশাবং, রিসপ, কোলাখাম, ডাবলিং, আলগারা, কাফেরগাঁও, পানবু, সামসিং, চুইখিম, পেডং, রামধুরা, তোদে তাংটা এর মত পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। সূত্র মারফৎ খবর, আজ কিংবা আগামীকালের মধ্যে খুলে যাবে, সিঙ্গালিলা ট্রেকিং রুট। এই রুটের অন্যতম আকর্ষণ সান্দাকফু। আশার কথা এই যে, গতকাল অব্দিও যে সমস্ত আতঙ্কিত পর্যটক বুকিং ক্যানসেল করার কথা ভাবলেন তারাই এখন প্লেন বাতিল না করে পাহাড় কিংবা ডুয়ার্সের নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্রগুলি বেছে নিচ্ছেন
সচল জনজীবন
গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়ি বুকিং করে পর্যটক দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিমে ঘুরতে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেরই ডুয়ার্স ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল কিন্তু বিপর্যয়ের কারণে সিকিম বেছে নিয়েছেন। এনজেপি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উদয় সাহা জানান অতি বৃষ্টির কারণে বিপর্যয় নেমে আসায় গত দু’দিন ব্যবসা খারাপ গিয়েছে। বহু পর্যটক দার্জিলিং, মিরিক এবং কালিম্পং এর বুকিং বাতিল করে দিয়েছিল কিন্তু বর্তমানে সব আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এসিটি এর কনভেনার রাজ বসু বলেন বন্যায় মিরিক, বিজনবাড়ি, সুখিয়াপোখরি, শিসামারা নদীর ধারে হোম স্টেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই বর্তমানে উত্তর সিকিম ও দার্জিলিং পাহাড়ের কয়েকটি জায়গা বাদ দিয়ে সর্বত্রই পর্যটকদের যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিপর্যয়ে প্রাণহানির সংখ্যা
তবে জলের তোরে জঙ্গলের ভিতরে নদীর উপরে বেশ কিছু কাঠের সেতু ভেঙে গিয়েছে। অতি দ্রুততার সাথে সেগুলি মেরামত করার কাজ চলছে। জল নামলে খুব শীঘ্রই ডুয়ার্স এলাকা গুলিতে তার সাফারি হাতি সাফারি চালু করা হবে। এছাড়া দুই একটি জায়গা বাদ দিয়ে ডুয়ার্সের অভয়ারণ্য গুলি মোটামুটি ভাবে সচলই রয়েছে। নতুন করে আর কোন পশু আটকে থাকা বা মৃত পশুক দেহ পাওয়া যায়নি। কিন্তু পুলবাজারের বাসিন্দা উপেন্দ্রকুমার রামের (২৮) দেহ এদিন উদ্ধার হয় রঙ্গিত নদীতে। তাকে নিয়ে এই বিপর্যয়ে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৭।








