সমাজে ‘কালো মেয়ে’ (Black Girl) র কোনো স্থান নেই। কালো মানেই নীরিহ, কালো মানেই অবহেলিত, কালো মানেই সমাজের নীচু, নগন্য ব্যক্তি। আর তাই তো ‘কালো মেয়ে’-র বিয়ে হয়না, ফর্সা মেয়ের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। পাত্র পক্ষরা সবসময়ই চান বৌমা যেন ফর্সা সুন্দরী হয়, আর সেকারণেই তো কালো মেয়েরা যেন ‘সমাজের অবাঞ্ছিত পদার্থ’। কিন্তু সমাজে যতই কালো মেয়ের এমন দূরবস্থা দেখা যাক না কেন, টিভির পর্দায় রমরমিয়ে বিশেষ করে বাংলা সিরিয়ালে (Bengali Serial) কালো মেয়েদের কাহিনী টিআরপি তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে।
যারাই সমাজে কালো মেয়েকে অবাঞ্ছিত মনে করছে, আজ তারাই টিভির পর্দায় বসে বসে সেই মেয়েদের কাহিনী দেখছেন, বাহবা দিচ্ছেন। বর্তমানে ধারাবাহিকের অবস্থান লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শ্যামবর্ণা নায়িকাদের গল্প গুলোই রেটিং ভালো পাচ্ছে, সেই তালিকায় পিছিয়ে রয়েছে তথাকথিত ফর্সা সুন্দরী নায়িকারা। বর্তমানে টিআরপি তালিকা জুড়ে স্টার জলসার (Star Jalsha) জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ (Anurager Chowa) কয়েক মাস ধরেই শীর্ষে বিচরণ করছে। এই ধারাবাহিকের কাহিনীর মুখ্য চরিত্রে রয়েছে ‘কালো মেয়ের উপাখ্যান’।
ধারাবাহিকটি কেন টিআরপি তালিকায় সবার উর্ধ্বে? এখানে কিন্তু ধারাবাহিকের নায়িকা দীপা(Deepa)র গায়ের রংকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না, প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তাঁর সংগ্রামকে। দীপা চরিত্রে অভিনয় করছেন যিনি তিনি হলেন স্বস্তিকা ঘোষ (Swastika Ghosh)। বাস্তবে অভিনেত্রী বেশ ফর্সা, কিন্তু মেকআপের দ্বারা চরিত্রের জন্য কালো করা হয়েছে তাকে। এই চরিত্রে অভিনয়ের শুরুতে তাঁকে শুনতে হয়েছে, কালো মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করলে পরিচিতি পাবেনা। কিন্তু আজ সে পরিচিতি পেয়েছে, তাঁর কথায় ‘সময়টা বদলাচ্ছে’।
অন্যদিকে জি বাংলার (Zee Bangla) আরও এক ধারাবাহিক রয়েছে ‘রাঙা বউ’ (Ranga Bou)। এই ধারাবাহিকটিও টিভির পর্দায় বেশ জমজমাট। টিআরপি তালিকাতেও নাম রয়েছে। রাঙা বউয়ের নাম ভূমিকায় মুখ্য অর্থাৎ ‘পাখি’ (Pakhi) চরিত্রে অভিনয় করছেন শ্রুতি দাস (Shruti Das)। তাঁর গায়ের রং কিন্তু শ্যামবর্ণ। সে যেমন সেরকমই চরিত্রেই পেয়েছেন অভিনয়ের সুযোগ। শুধু রাঙা বউ তেই নয়, তিনি ‘ত্রিনয়নী’ (Trinayani) তেও অভিনয় করেছেন। এতে তিনি খুশি।
আরও পড়ুনঃ বৌমারা ফেল! হট লুকে নেটপাড়া কাঁপাচ্ছেন ছোটপর্দার এই ৫ শাশুড়ি, রইল ছবি
শ্রুতির কথায়, ‘আমি খুবই গর্বিত। আমি যেমন আমি সেরকমই চরিত্রে অভিনয় করছি। আমার গায়ের রং শ্যামলা , সেটাকে ফুটিয়ে তুলতে মেকআপ করতে হয়না। আমি তো জানতামই না, আমার মতো মেয়েও এরকম কাজের সুযোগ পাবে। আমি ইন্ডাস্ট্রির কাছে কৃতজ্ঞ। আসলে গল্প পছন্দ হলে মানুষ ধারাবাহিক দেখবেন, সেটা কালো হোক বা ফর্সা।’ এরপর রয়েছে আরও এক ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’ (Krishnakoli)।
নামের সাথেই রয়েছে চরিত্রের মেলবন্ধন। এই ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিয়াসা রায় (Tiyasha Roy)। অভিনেত্রী বাস্তবে বেশ সুন্দরী ও ফর্সা, কিন্তু চরিত্রের কারণে তাকে সাজানো হয়েছিল শ্যামলা। তিনি জানান, ‘বাংলার দর্শক কালো বা ফর্সার ফারাক করেননা, সেটা বোঝাই যাচ্ছে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ বা ‘কৃষ্ণকলি’ দেখে। কৃষ্ণকলিতে আমার গায়ের রং কালো ছিল, এখনও আমাকে অনেকেই বলেন, ওইটাই ছিল বেশি মিষ্টি’। সবশেষে বলাই যায়, একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘কালো জগতের আলো’। বর্তমান সময়ের ধারাবাহিক গুলোতেই এই বাক্যটিরই সার্থকতা মিলছে।