আমাদের শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তা খুব গুরুত্বপূর্ন। জল ছাড়া শরীরে বাসা বাঁধতে পারে একাধিক রোগ। জলের অভাবে শরীরে অনেক কঠিন রোগের লক্ষণ দেখা যায়। মানুষ খাবার ছাড়া বেশ কিছুদিন কাটিয়ে দিতে পারলেও জল ছাড়া একটা দিন কাটানোও সম্ভবপর নয়। আমাদের শরীরের ৭৫ ভাগ জল দিয়ে তৈরী। শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিলে মাথা ধরা, ক্লান্তি, বারবার খিদে পাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি নানান রোগের শিকার হতে পারে আপনার শরীর। তবে শরীরে হঠাৎ করেই ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ দেখা দিলে তা হতে পারে রোগের লক্ষণ (Symptoms of diseases to Repeatedly peeing) তাকে মোটেও হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়।
তবে এমনটাও হয় যে আপনি ঘন ঘন বাথরুম যাচ্ছেন অথচ ভাবছেন বেশি পরিমানে জল পান করার কারণেই আপনার সাথে হয়তো এমনটা হচ্ছে। কিন্তু আসলে কি সত্যিই তাই ? এমনটা নয় তো যে, আপনার শরীরের বড়োসড়ো কোনো রোগ বাসা বাঁধছে আর আপনি তা টেরও পাচ্ছেননা। আজ আপনাদের এমন কিছু তথ্য জানাবো যা আপনাকে সচেতন হতে সাহায্য করবে শরীরের বড়ো কোনো রোগ হওয়া আটকাতে। শরীরে ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ কোন রোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে (Symptoms of diseases to Repeatedly peeing)।
আমাদের শরীরে জলের প্রচুর পরিমানে প্রয়োজনীয়তা হলেও আমরা যদি অতিরিক্ত জল পান করে ফেলি তাহলে আমাদের ঘন ঘন বাথরুম যেতে হয়। আমরা সেটাকে সাধারণ ভাবেই সচরাচর নিয়ে থাকি। কিন্তু এমন ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে আপনাকে শরীরের বড়ো কোনো রোগের লক্ষণ। সেইরকমই ৬ টি রোগের লক্ষণ আজ আমরা জানাতে চলেছি এই প্রতিবেদনে জেনে নিন ঘন ঘন প্রস্রাব কি কি রজার লক্ষণ হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব কোন কোন রোগের লক্ষণ : (What kind of Symptoms of diseases to Continue peeing )
ডায়াবেটিস (Diabetes)
ডায়াবেটিস একটি সাংঘাতিক রোগ। আর ঘন ঘন প্রস্রাব ডায়াবেটিস রজার প্রাথমিক লক্ষণ। এই রোগের টাইপ ১ ও টাইপ ২ এই দুই ধরণেরই ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রস্রাব প্রাথমিক লক্ষণ। আর আমরা জানি যে, প্রস্রাবের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে গ্লুকোজ বাইরে বের হয়। তাই এক্ষেত্রে সন্ধ্যের দিকে জল কম খাওয়া উচিত এবং ক্যাফেইন এড়িয়ে চলাই উচিত।
প্রটেস্টের সমস্যা (Prostate Problem)
এভাবে ঘন প্রস্রাবের কারণ আপনার প্রটেস্টের সমস্যাও হতে পারে। প্রোটেস্ট আমাদের মূত্রনালীর চারপাশে থাকা একটি গ্রন্থি। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই গ্রন্থিটি বাড়তে থাকে। আর তাই পঞ্চাশঊর্দ্ধ ব্যক্তিদের ঘন ঘন বাথরুম যেতে লক্ষ্য করা যায়। তবে এই প্রোটেস্ট গ্রন্থি অনেক সময় ক্যান্সারের কারণেও বড়ো হতে থাকতে পারে তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্যান্য স্নায়বিক রোগ (Neurological Disorders)
কখনও কখনও মূত্রাশয়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের ঘন ঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব দূরীকরণের চেষ্টা করা উচিত। তাই অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এর থেকে শরীরে আরও অনেক রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের যন্ত্রণায় নাজেহাল দশা! বাড়িতে ট্রাই করুন এই সহজ টিপস, ফল পাবেন হাতেনাতে
ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস (Interstitial Cystitis)
এটি শরীরের একটি দীর্ঘস্থায়ী দশা বা অবস্থা যা মূত্রাশয়ে চাপের সৃষ্টি করে। অল্প থেকে ধীরে ধীরে প্রবল ব্যাথার সৃষ্টি করে। কখনও কেবল মূত্রাশয় নয় শ্রোণীতেও ব্যাথার সৃষ্টি করে। এই রোগের কারণে মস্তিষ্কে প্রস্রাবের যে সংকেত মূত্রাশয় দ্বারা প্রেরণ হয় সেই সংকেতগুলি মিশ্রিত হয়ে যায় আর আপনাকে ঘন ঘন বাথরুম যেতে হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমানে প্রস্রাব হয় না। তাই এই অবস্থায় আপনার অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হাইপারক্যালসেমিয়া (Hypercalcemia)
এই রোগের কারণে আমাদের রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমান বৃদ্ধি পায়। আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম আমাদের হার্ট, কিডনি ও হারের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এই রোগটি মূলত আমাদের ঘাড়ের কাছে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির চারপাশে যে ক্ষুদ্র চারটি গ্রন্থি থাকে তাদের কোনো একটির অতিরিক্ত সক্রিয়তা এই রোগের সৃষ্টি করে। এই রোগের লক্ষণ হিসাবে দেখা যায় অতিরিক্ত জল পিপাসা আর ঘন ঘন প্রস্রাব।
আরও পড়ুনঃ কেন শ্রী কৃষ্ণের গায়ের রং নীলাভ! জেনে নিন আসল কারণ
পেলভিক ফ্লোর ডিসঅর্ডার (Pelvic Floor Disorders)
পেলভিক ফ্লোর আসলে একদল পেশী যার অবস্থান শরীরের নিচের অংশে অর্থাৎ পেলভিসের মেঝেতে (Base)। এই পেশীগুলি আমাদের শরীরে মূত্রাশয়, প্রোটেস্ট গ্রন্থি, জরায়ু, মলদ্বার এগুলির গঠন ও কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এই পেশীগুলির ডিসঅর্ডার অর্থাৎ কর্মহীনতার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা শরীরে দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ একান্ত জরুরি।