কেন বাঙালির ঘরে ঘরে আজই হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো? জানুন নামের পিছনের আসল কারণ

মা দুর্গা সপরিবারে কৈলাসে ফিরে গেলেও সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই বাঙালির ঘরে পুজো পেতে ফিরে আসেন মা লক্ষ্মী। এমনকি অনেক বারোয়ারি পুজোতেও দেখা যায় যে,

Antara Nag

kojagori lakshmi puja 2025

মা দুর্গা সপরিবারে কৈলাসে ফিরে গেলেও সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই বাঙালির ঘরে পুজো পেতে ফিরে আসেন মা লক্ষ্মী। এমনকি অনেক বারোয়ারি পুজোতেও দেখা যায় যে, মা দুর্গার ফিরে যাওয়ার পর সেই আসনেই পুঁজিতা হচ্ছেন লক্ষ্মীদেবী। কিন্তু যে অমাবস্যায় মহালয়া পালিত হয়, ঠিক তার পরের পূর্ণিমাকেই কেন কোজাগরী পূর্ণিমা (Kojagori Lakshmi Puja) বলা হয়? এই দিনে কেন রাত জাগতে হয়? এর পিছনের আসল রহস্যটি কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

কোজাগরী লক্ষীপুজো

কোজাগরী কথাটি এসেছে মূলত ‘কে জাগতী’ কথাটি থেকে।’কে জাগতী’ কথাটির মূল অর্থ হলো ‘কে জেগে আছো’? হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস যে, কোজাগরী পূর্ণিমার দিন লক্ষ্মীদেবী কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে পুজো পেতে ফিরে আসেন। লক্ষ্মীদেবী অন্ধকার মোটেই পছন্দ করেন না। তাই যে গৃহস্থের বাড়ি আলোয় সজ্জিত, দাওয়ায় আলপনা এঁকে পরিপাটি করে সাজানো সেই গৃহস্থের বাড়িতেই লক্ষ্মীদেবী পুজো পেতে প্রবেশ করে থাকেন। অপরপক্ষে, যে গৃহস্থের বাড়ি অন্ধকার, সাজানো নয়, দরজা বন্ধ থাকে সেই গৃহস্থের বাড়িতে আশীর্বাদ না দিয়েই লক্ষ্মীদেবী প্রস্থান করেন। তাই বাড়ির মেয়েরা সারারাত জেগে পাহারা দিয়ে থাকেন কখন লক্ষ্মীদেবী এসে ডাক দেন, যাতে তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে ধনদেবীকে আমন্ত্রণ জানানো যায়। সেই বিশ্বাস থেকেই লক্ষ্মীপুজোর দিন বাড়ির মেয়ে-বউরা রাত জেগে থাকেন।

মায়ের আশীর্বাদ

হিন্দু শাস্ত্র মতে লক্ষ্মীদেবীর আশীর্বাদ ধন্য হলে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে গৃহস্তের জীবন। পূজা-পাঠ, স্ত্রুতির দ্বারা লক্ষ্মীদেবীকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তার আশীর্বাদ পাওয়া সম্ভব। তাই লক্ষ্মীদেবীর আশীর্বাদ পেতেই এই পূর্ণিমার দিনে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করা হয়। এবং রাত জেগে দেবীর অপেক্ষা করা হয়, কখন তিনি আসেন। আর এই রাত জাগা থেকেই এই পূর্ণিমার নামকরণ হয়েছে কোজাগরী পূর্ণিমা। সংস্কৃত শ্লোকের বলা আছে, “নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ। তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।।” অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে যিনি রাত জেগে পাশা খেলেন তাঁকে দেবী ধনসম্পদ দেন। অবশ্য পাশা খেলার বিষয়টি এসেছে রাত জাগতে গিয়ে যাতে ঘুম না চলে আসে সেই কারণে।

কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো | Kojagori Lakshmi Puja 2025

তিথি অনুযায়ী লক্ষ্মীপূজোর সময় যাই হোক না কেন, পরম্পরা অনুযায়ী বাঙালি বাড়িতে আজও তাই সন্ধ্যার পরেই দেবীর আরাধনার রেওয়াজ রয়েছে। ফুল-ফল-মালা, নৈবেদ্য সাজিয়ে ধূপ-ধুনা জ্বালিয়ে, কাসর-ঘন্টা বাজিয়ে, শঙ্খ-উলুধ্বনির মাঝে দেবীকে বরণ করে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে দেবীর পূজো।

তিথি

এবছর কোজাগরী পূর্ণিমা শুরু হচ্ছে ৬ই অক্টোবর থেকে এবং তা শেষ হবে ৭ই অক্টোবরে। কিন্তু যেহেতু লক্ষ্মীপূজো মূলত সন্ধ্যার পরেই দেওয়ার রীতি চলে আসছে, তাই অধিকাংশ বাঙালি বাড়িতেই ৬ই অক্টোবর সন্ধ্যার পরেই লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা শুরু হবে। অর্থাৎ আজ ৬ই অক্টোবর সায়হ্নে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনায় ব্রতী হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়।

পূজোর উপকরণ

লক্ষ্মীদেবী যেহেতু আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ পছন্দ করেন তাই লক্ষ্মীপূজোর দিন ঘরে ঘিয়ের প্রদীপ জালানো হয়। সেই সাথে প্রসাদ হিসেবে দেবীর সামনে হাজির করা হয় খিচুড়ি, নারকেলের নাড়ু, সুজি, তালের ফোঁপড়া, আখ ইত্যাদি। হিন্দুমতে বিশ্বাস এই যে, আলপনা দেবীর খুব প্রিয় বিষয়। তাই লক্ষ্মীপুজোর দিন বাঙালি গৃহস্থ পরিবারে বাড়ি ঘর-দুয়ার বিশেষভাবে আলপনা দিয়ে সাজানো হয়।