পুজোর সময় সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেন এসে ঢল নামায় কলকাতার বুকে। এখন তো মোটামুটি ভাবে মহালয়ার পর থেকেই মানুষ প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড় জমাতে শুরু করে দেয়। ফলে যান জট হতে শুরু করে কলকাতা জুড়ে। তাই এই সময়ে কলকাতা পুলিশের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় শহরকে সচল রাখা। একই রকম ভাবে চাপ বাড়ে বিধাননগর কমিশনারেটের উপরেও।
বিধাননগর এলাকায় পুজোর মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যেমন রাস্তাঘাটের কিছু কিছু স্থান বন্ধ, কিছু রাস্তা ওয়ান ওয়ে তো কিছু জায়গায় নাকাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। ঠিক তেমনি মানুষ যাতে সঠিকভাবে ট্রাফিক আইন মেনে চলে তার জন্য কিছু জরিমানার (Traffic Challan) ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। বিধান নগর কমিশনারেট সূত্রে খবর মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত বিধান নগর এলাকায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সিগন্যাল না মানা, নো-পার্কিং জনে গাড়ি রাখা, হেলমেট না পরে বাইক চালানো, গাড়ির কাগজপত্র ঠিকঠাক না থাকা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো সহ বিভিন্ন কারণে প্রচুর জরিমানা করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে এই জরিমানা বাবদ সরকারের রাজকোষে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা যুক্ত হয়েছে।
পুজোয় ৬০০০ ট্রাফিক চালান | Traffic Challan During Durgapuja
শুধুমাত্র ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করাই নয়, যে সমস্ত বাইকবাজ পুজোর সময় রোমিও সেজে মডিফাইড সাইলেন্সার লাগিয়ে বিকট আওয়াজ করে রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে তাদেরকেও জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। জানা গিয়েছে এই ধরনের ৯৫ টি বাইকে আটক করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রকম ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য প্রায় ৬ হাজার গাড়ি, বাস, ট্যাক্সি ও বাইকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আয় প্রায় ৫০ লক্ষ
জানা গিয়েছে, পুজোর শুরু থেকে অর্থাৎ ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে ২রা অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১২ দিন ধরে এই স্পেশাল অভিযান চালানো হয়েছে। তার দরুন মোট ৫ হাজার ৯৫৮টি ভারী যানবাহন, বাস, প্রাইভেট কার, বাইক, অটো এবং ট্যাক্সিকে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৪৯টি ভারী গাড়ি, ৮২৪টি বাস, ১১১৯টি প্রাইভেট কার, ৩০৫৪টি মোটরসাইকেল ও স্কুটি, ৩৪টি অটো এবং ৬৭৭টি ট্যাক্সি। আর এই সমস্ত গাড়িগুলিকে জরিমানা করে মোট আদায়ের পরিমাণ ৪৯ লক্ষ ২ হাজার ৫০০ টাকা
পুজোর এই ১২ দিনের মধ্যে সব থেকে বেশি জরিমানা করা হয়েছে মহালয়ার পরের দিন। এই দিন মোট ৮২০ জনের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে, যার থেকে আদায় হয়েছে ৬ লক্ষ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা। জরিমানার সংখ্যা দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মহালয়ার দিন এইদিন মোট ৮১৯ জনকে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে, যা থেকে আদায় হয়েছে ৬ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা। আর সব থেকে কম জরিমানা হয়েছে দশমীর দিনে। এই দিন মোট ২০১১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে, যার থেকে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ২ লক্ষ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। দশমীর দিন মূলত প্রতিমা বিসর্জনের কাজে ব্যস্ত থাকায় মানুষের আনাগোনা রাস্তায় কম ছিল। যে কারণে ওই দিন জরিমানার পরিমানও কম হয়েছে।
কোন আইনে কত মামলা?
পুজোর এই ১২ দিনে যে সমস্ত মামলা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানার কারণে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে, নো-পার্কিং জোনে গাড়ি রাখার জন্য ১৯০৮ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। একটি বাইক বা স্কুটিতে দুইজনের বেশি সবারই থাকার কারণে ৭৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে, হেলমেট না থাকার কারণে ১৪০৩ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ৪৮ জন গাড়ি ও বাইক আরোহীকে জরিমানা করা হয়েছে।
বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানোর জন্য ৬৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে, আর সময়সীমা লঙ্ঘন করে গাড়ি চালানোর জন্য ১৪০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য ২১৬৩ জনকে জরিমানা করা হয়েছে, স্পট লাইন পার করার জন্য ৩৬৮ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। এর সাহে রেডিও প্লেয়িংয়ের কারণে ৬৩ জনকে জরিমানা করা হয়েছে, আর অবস্ট্রাকশনের জন্য ৪২ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। সবশেষে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি-বাইক চালানোর জন্য ২২০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।








